Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইন্টারনেটে কিশোরীদের পাশাপাশি যৌন নিপীড়নের শিকার কিশোররাও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২২ ২৩:১০

ঢাকা: দেশের শহর এবং গ্রামের ৪৫৬ জন নবম ও দশম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থীর মাঝে ৬৪ শতাংশ কিশোরী ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এরই পাশাপাশি ৫৬ শতাংশ কিশোরও ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানাভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এ ছাড়াও শহরে শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড় গুণেরও বেশি বলে জানা গেছে এক গবেষণায়।

২০২১ সালে পরিচালনা করা গবেষণাটি ফলাফল প্রকাশ করে জানানো হয়, যেসব শিশু ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং চ্যাটরুম ব্যবহার করে তাদের ইন্টারনেট মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। গবেষণাটি পরিচালনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিএসএমএমইউ’র বি-ব্লক শহীদ ডা. শহীদ মিলন হলে এই গবেষণার ফলাফল জানানো হয়। বিশ্ব শিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভাগটির বিগত পাঁচ বছরের শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

এদিন ‘অনলাইনে শিশু নির্যাতন’ শীর্ষক গবেষণা উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ’র ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম ইবনে তৌহিদ।

গ্রাম এলাকার ৪৬০ জন শিশুর ওপর পরিচালনা করা গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শহরাঞ্চলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্রামেও। গ্রামীণ এলাকার ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশুই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। একইসঙ্গে তাদের মাঝে কমপক্ষে একটি, দুটি বা তিনটি সাইবার অপরাধের প্রবণতা ছিল যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ, ৩৮ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা বেশি শিকার হয় এমন বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের মধ্যে ছিল উৎপীড়ন, উপহাস, গুজব কিংবা অপমান (৩৫ শতাংশ), অসৎ উদ্দেশ্যে বেনামে যোগাযোগ (২৯ শতাংশ), যৌন-নিপীড়নমূলক বার্তা কিংবা মন্তব্য (১১ শতাংশ) এবং যৌনতাপূর্ণ ছবি বা ভিডিও (১৭ শতাংশ)।’

ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সরকারের নীতির কারণে, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট সম্পর্কে কম জ্ঞান এবং সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার কারণে, অপরাধীরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিশুদেরকে নির্যাতন করতে সক্ষম হয়।’

এছাড়াও ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী ২৪ জন শিশুর ওপর পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, শিশু নির্যাতন সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি গতানুগতিক এবং কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা যার মারাত্মক শারীরিক এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষত কমবয়সী শিশু, মেয়ে-শিশু এবং গরীব শিশু তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পরিবার, খোলা এবং কর্মক্ষেত্রে তারা নিম্নস্তরে এবং নিম্ন অবস্থানে থাকায় তাদের কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘শিশুর ১৮ বছর বয়সের আগে ঘটে যাওয়া আঘাতমূলক এবং পীড়াদায়ক ঘটনা যা শিশুর ওপর মানসিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন, মানসিক এবং শারীরিক অবহেলা, পিতামাতার বিচ্ছেদ, মায়ের প্রতি সহিংসতা, বাড়িতে মাদকের ব্যবহার, পরিবারে মানসিক রোগী থাকা এবং পরিবারের সদস্যদের কারাবাস- এ বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত।’

তিনি বলেন, ‘যেসব মায়েরা তিন বা ততোধিক প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন, তাদের মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা সম্পন্ন শিশু জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা চারগুণ বেশি। অন্য একটি গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্কদের বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার সঙ্গে প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার একটি উল্লেখযোগ্য যোগসূত্র পাওয়া গেছে।’

গবেষণা ফলাফল উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘শিশু নির্যাতন একটি নিত্যনৈমিত্তিক এবং বেদনাদায়ক ঘটনা যা বাংলাদেশি সমাজে সর্বজন স্বীকৃত। কমবয়সী শিশু, মেয়ে এবং দরিদ্র শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুদের সবসময় ছোট এবং বাবা-মার অধীনস্থ মনে করা হয়, তাই পরিবার, স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রে কোথাও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।’

অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশি পিতা-মাতারা অর্থনৈতিক, শারীরিক এবং মানসিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন যা তাদের অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, এবং শিশু নির্যাতনের সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের শিশুদের সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার খুবই সামান্য; বস্তি এলাকায় বসবাসকারী মাত্র ৭ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ৪ শতাংশ মেয়ে শিশু তার নিজ এলাকার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। মাত্র ০.৫ শতাংশ শিশুর নিজস্ব টয়লেট রয়েছে, যা বস্তি এলাকায় মৌলিক চাহিদা মেটানোর অধিকার বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনাকে চিত্রিত করে।

গবেষণা ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে শিশু নির্যাতন একটি উদ্বেগজনক ঘটনা এবং শিশু বিকাশের জন্য একটি বড় বাধা হিসাবে স্বীকৃত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশু নির্যাতন বলতে সব ধরনের শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অবহেলা, বাণিজ্যিক বা অন্যান্য নির্যাতনকে বোঝায় যার ফলে দায়িত্ববোধ, বিশ্বাস বা আত্মমর্যাদার প্রেক্ষাপটে শিশুর স্বাস্থ্য, বেঁচে থাকা এবং বিকাশের ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশে শিশু নির্যাতনের কোনো স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। যদিও, বাংলাদেশি আইনি ব্যবস্থায় শিশুদের উপর করা প্রায় প্রতিটি নির্যাতনের শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মানদণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।’

তারা জানান, জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য, ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ গ্রহণ করে এবং ১৯৫টি দেশ সনদটি অনুমোদন করে। সনদ এর ১৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রতিটি জাতি সকল ধরনের অত্যাচারের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করতে বাধ্য থাকবে।

সারাবাংলা/এসবি/একে

ইন্টারনেট কিশোর-কিশোরী মানসিক নিপীড়ন যৌন নিপীড়ন শারীরিক নির্যাতন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর