সিন্দুর্ণায় কে পাচ্ছেন নৌকা
১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৪৫
ঢাকা: এরইমধ্যে লালমনিরহাট হাতীবান্ধা উপজেলার ৫ নং সিন্দুর্ণা ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনের মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। আগামী ২৯ ডিসেম্বর সম্ভাব্য ভোটগ্রহনের দিন ধার্য্য করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি প্রার্থীরাও দৌড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন। নৌকার মনোনয়ন পেতে বেশ কয়েকজন প্রার্থী যোগাযোগ শুরু করেছেন। নৌকা প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন— আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও আওয়ামী লীগের সাবেক ইউনিয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন লাবলু, ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদ ও ছাত্রলীগের সাবেক উপজেলা সভাপতি ফাহিম শাহরিয়ার খান জিহান।
এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান খতিব উদ্দিনের ছেলে অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। আর জাতীয় পার্টি থেকে বেশ কয়েকবার নির্বাচন করে হেরে যাওয়া প্রার্থী তৌহিদ হাসান খান মুকুলও এবারে চেয়ারম্যান পদে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভোটগ্রহণ আগামী ২৯ ডিসেম্বর। তার আগে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সর্বশেষ তারিখ ১ ডিসেম্বর, যাচাই বাছাই ৩ ডিসেম্বর আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ ডিসেম্বর।
ভোটারদের অভিযোগ, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন মূলত ১৯৮৯ সালে আলিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯১ সালে তিনি কলেজ সভাপতি থাকাকালে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এরপর রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর ২০১৪ সালে ইউপি নির্বাচনের সময় তফসিল ঘোষণার মাত্র ১৪ দিন আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং টাকার বিনিময়ে গোপনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নেন। এরপর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইউপি নির্বাচনে এসে নুরুল আমিন নৌকা না পেলে আবার প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করেন। এবার তিনি আবারও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং মোটা অংকের টাকা মনোনয়ন পেতে ব্যয় করছেন।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, নুরুল আমিনের বাবা মৃত আব্দুল গফুর একজন চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। যা ২০২০ সালে বের হওয়া গেজেটে লালমনিরহাট জেলা রাজাকারের তালিকায় রয়েছেন। মৃত আব্দুল গফুরের বাবার নাম মৃত গেরফা শেখ লেখা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে গড্ডিমারী ও তার আশেপাশের এলাকায় আব্দুল গফুর রাজাকার রফিকুল ইসলাম, মনসুর আলীসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিলে ২৯ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করেন, জ্বালিয়ে দেন ১৫২টি বাড়ি। একইসঙ্গে তারা লুটতরাজও চালায়। এছাড়া সিন্দুর্ণা এলাকায় গফুরের নেতৃত্বে ১৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যাদের পূর্ব সিন্দুর্ণায় গণকবর দেওয়া হয়েছে। গণকবরটি এখন সংরক্ষিত রয়েছে।
সিন্দুর্ণা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সদস্যদের অভিযোগ, সেই চিহ্নিত রাজাকার পুত্র নুরুল আমিনকে পুনরায় নৌকা প্রতীক দিলে শহীদদের অমর্যাদা করা হবে। আর কোনোভাবেই এটি মেনে নেওয়া হবে না। যারা প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ করে এবং অতীতে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের হাতেই যেন নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়, সেই আবেদন শেখ হাসিনার কাছে।
সিন্দুর্ণা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯ নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি মতিয়ার রহমান বলেন, ‘সাখাওয়াত হোসেন লাবলু ছাত্রলীগ করা ছেলে। এরপর সে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছে। তাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হোক। নুরুল আমিন চিহ্নিত রাজাকারের ছেলে, তাকে যেন নৌকা প্রতীক দেওয়া না হয়।’
সিন্দুর্ণা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নং ওয়ার্ডের যুগ্ম সম্পাদক আল আমিন বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছে শুনেছি, নুরুল আমিনের বাবা মৃত আব্দুল গফুর চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। সুতরাং রাজাকারের ছেলের হাতে নৌকা প্রতীক উঠুক এটা চাই না।’
শহীদুল ইসলাম সেলিম নৌকা প্রত্যাশী। তিনি ঠিকাদার হিসেবে বেশি পরিচিত। সাবেক চেয়ারম্যান মৃত খতিব উদ্দিনের বাড়ির পাশে একটি কালভার্ট করার সময় রডের পরিবর্তে বাঁশের বাতা ব্যবহার করেছিলেন তিনি। এ নিয়ে এলাকাবাসী একত্র হয়ে কালভার্টের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হয়েছিল।
নুরুজ্জামান আহমেদ গত বছর নৌকা প্রতীকে ভোট করে স্বতন্ত্র প্রার্থী খতিব উদ্দিনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এজন্য এবার তিনি নৌকার মনোনয়ন নাও পেতে পারেন বলে জানান এলাকাবাসী। এছাড়া তার সেরকম কোনো তৎপরতাও নেই।
জিহান ছাত্রলীগের সাবেক উপজেলা সভাপতি ছিলেন। গত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, কিন্তু নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবার তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
সারাবাংলা/ইউজে/এনএস