Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিমাখাতে আস্থার সংকট কাটানোর তাগিদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো : দেশে বিমাখাত নিয়ে মানুষের আস্থার সংকট কাটাতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীমউল্লাহ।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় গ্রাহক ও বিমাখাত সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের মতামতে আস্থার সংকটের বিষয়টি উঠে আসার পরিপ্রেক্ষিতে সচিব শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করার তাগিদ দেন। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এই সভার আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিষয়ের সচিব বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিমাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। এজন্য সরকার বিমাখাতের উন্নয়ন চায়। বীমা দুই ধরনের আছে, লাইফ ও নন লাইফ। যেসব বিমা নন লাইফ সেগুলোর জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। সেজন্য অনেকে এই খাতে বাধ্য হয়ে আসেন। কিন্তু জীবনবিমার জন্য আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই । এ জন্য অনেকে মনে করেন, এই খাতে মানুষ আসছে না।’

আস্থার সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানেই অনেকেই বলেছেন আস্থার সংকটের কথা। সংকট নেই, আবার আছে। কী কী কারণে সংকট সেগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। বিমাখাত এমন এক খাত, আস্থা অর্জনের জন্য এখানে ১০০ পয়েন্ট পেতে হবে, ৯৯ দশমিক ৫ পয়েন্ট পেলেও হবে না। অর্থাৎ একটি কোম্পানি যদি তার ১০০ জন গ্রাহকের মধ্যে ৯৯ জনকে প্রাপ্য সেবা দেয় আর একজনকে তার প্রাপ্য টাকা না দেয় তাহলে অর্জন বলতে কিছুই থাকবে না। একজনের জন্য ৯৯ জনকে দেওয়ার যে সাফল্য সেটি ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ যে একজন পাবেন না, তিনি বাইরে গিয়ে কোম্পানি সম্পর্কে বদনাম করবেন। সেটার প্রভাব পুরো বিমাখাতের ওপর পড়বে।’

বিজ্ঞাপন

এই সংকট কাটাতে শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়ে সচিব সলীমুল্লাহ বলেন, ‘কোম্পানিকে সৎ হতে হবে, পেশাদারিত্ব থাকতে হবে এবং গ্রাহকদের প্রাপ্য সেবা দিতে হবে। ৯৯ জন সঠিক সময়ে সেবা পেলেও একজন যদি না পায় তাহলে ৯৯ জনকে ভালো সেবা দেওয়ার কোনো দাম থাকবে না। আপনারা আপনাদের কর্মীদের বলবেন, আমরা শতভাগ সততা নিয়ে কাজ করে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। কোনো কলঙ্কের কালিমার তিলক যেন আমাদের কপালে না লাগে।’

সভায় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, ‘একজন গ্রাহক যদি তার প্রিমিয়ামের টাকা সঠিক সময়ে ফেরত না পায়, প্রিমিয়াম নিয়ে যদি পকেটে রেখে দেওয়া হয়, গ্রাহককে হয়রানি করা হয় তাহলে এই ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে বিমা একটি টেকনিক্যাল বিষয়। এটা বোঝা সহজ নয়। এ জন্য সাধারণ শিক্ষায় বীমার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘বিমাখাতে আস্থার সংকট আছে এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। একবার এক সভায় বিমা কোম্পানির একজন বললেন, আমাদের অবস্থা এত খারাপ হয়েছে যে, আমাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না, কারণ আমরা ইন্স্যুরেন্স করি। সুতরাং আস্থার সংকট কাটাতে হলে আমাদের বিমাখাতের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর একবার কমিশন সিস্টেম পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছিলাম। তখন বিগ বিগশটরা অনুরোধ করল, আমি আবার সেটি তুলে নিয়েছিলাম। না হলে আমার গদি থাকত না।’

ইমেজ সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘বিমাখাতে যারা কাজ করেন তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সার্ভেয়ারদের মধ্যে গলদ আছে, একেকজনের একেক মত। এজেন্টরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে কিছু জমা দেয় আর কিছু মেরে দেয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। বীমাখাতের ঐতিহ্য ফেরানোর জন্য আমরা আইন করছি। কিন্তু শুধু আইন করলে তো হবে না, আইন মানতে হবে।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিমাখাত অবহেলিত ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিমাখাতের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ১৯৩৮ সালের আইন দিয়ে চলছিল বিমা কোম্পানিগুলো। তখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা মনে করত যে এটা বঙ্গবন্ধুর খাত। কারণ বঙ্গবন্ধু একসময় আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করতেন। এজন্য তারা বিমাখাতকে পিছিয়ে রেখেছিল।’

বিমা কোম্পানির পরিচালকদের উদ্দেশে শেখ কবীর বলেন, ‘আপনারা আপনাদের কোম্পানি থেকে নতুন নতুন প্রোডাক্ট বের করেন। তারপর বিমা কর্তৃপক্ষের কাছে দেন। নিশ্চয় উনারা অনুমোদন দেবেন। আপনাদের প্রোডাক্ট, আপনাদেরই প্রচার বাড়িয়ে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী কিন্তু শিক্ষাবিমার আওতায় এসেছে।’

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আস্থার সংকটটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনবিমা এবং কয়েকটি মানসম্পন্ন বেসরকারি কোম্পানি ছাড়া সবগুলো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের হয়রানি করছে। চট্টগ্রামে একটি বিমা একাডেমি প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বদিউল আলমসহ বিভিন্ন বীমা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং গ্রাহক পর্যায়ে কয়েকটি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা।

সারাবাংলা/আরডি/একে

আস্থাহীনতা জীবনবিমা বিমাখাতে সংকট বিমাঘাত সংকট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর