‘বিএনপি সমাবেশ ডাকলে আতঙ্কে পরিবহন বন্ধ থাকে’
১৯ নভেম্বর ২০২২ ২১:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপি সমাবেশ ডাকলে মালিক-শ্রমিকরা আতঙ্কে পরিবহন বন্ধ রাখতে ধর্মঘট ডাকেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি এর সঙ্গে সরকারের কোনো ‘যোগসাজশ’ না খোঁজারও আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দলটির জনসভাকে সামনে রেখে তথ্যমন্ত্রী সেখানে যান।
‘হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি যখন সমাবেশ ডাকে তখন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সবাই আতঙ্কে থাকেন। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আন্দোলনের নামে তারা বাস-ট্রাক ও জনগণের সম্পত্তির ওপর হামলা করেছিল, পুড়িয়ে দিয়েছিল। এজন্য বিএনপি যখনই সমাবেশ ডাকে, আতঙ্কে পরিবহন বন্ধ রাখতে মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘট ডাকেন। এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের যে সমিতি আছে, সেগুলো প্রাইভেট অর্গানাইজেশন। সেখানে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, আওয়ামী লীগ সব দলের নেতা আছেন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন।’
সভা-সমাবেশে বাধার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমাদের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। বিএনপির সমাবেশে আজ পর্যন্ত কি একটি পটকাও ফুটেছে? সরকার সহযোগিতা ও নিরাপত্তা বিধান করছে বলেই পটকাও ফুটেনি।’
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় লাখ লাখ মানুষের সমাগমের আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগে পলোগ্রাউন্ডে বিএনপি একটি সমাবেশ করেছিল। মাঠের তিনভাগের এক ভাগ বাদ দিয়ে একটি মঞ্চ করেছিল। বাকি দুইভাগের মধ্যেও অর্ধেক খালি ছিল। তারা যেভাবে বলেছিল আসলে সেরকম মানুষ হয়নি। পলোগ্রাউন্ডের কোণায় একটা কমিউনিটি হল আছে, সেখানে আগে ভ্যারাইটি শো হতো। সেই ভ্যারাইটি শোতে যে পরিমাণ মানুষ হতো তার চেয়ে একটু বেশি মানুষ হয়েছে বিএনপির সমাবেশে। চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলায়ও বিএনপির সমাবেশের চেয়ে তিনগুণ বেশি মানুষ হয়।’
এ সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে দুপুরে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি হচ্ছে শীতের পাখি। শীতকালে যেমন সাইবেরিয়া থেকে শীতের পাখিরা এসে আমাদের এখান থেকে ধান খেয়ে মোটাতাজা হয়ে আবার চলে যায়, বিএনপিও হচ্ছে শীতের পাখির মতো। পাঁচবছর খবর থাকে না, নির্বাচন যখন আসে তখন শীতের পাখির মতো আসে। এই শীতের পাখিদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না।’
‘এরা জনগণের শত্রু, এরা দেশের শত্রু, এদেরকে সব পর্যায়ে প্রতিহত করতে হবে। যারা হাওয়া ভবন বানিয়ে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলতো, যারা বিদ্যুৎ না দিয়ে খাম্বা লাগাতো, যারা একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা করেছে, যারা শাহ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামকে হত্যা করেছে, যারা সারাদেশে বাংলা ভাই সৃষ্টি করে গাছের সঙ্গে টাঙিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, পাঁচশ জায়গায় বোমা ফাটিয়েছে, তাদের হাতে দেশ তুলে দিতে পারি না।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, উনারা যদি আওয়ামী লীগকে বিদায় দিতে পারেন, তাহলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠন করবেন। আর বিএনপি নেতা আসাদুল হক দুলু নাকি বলেছেন, যদি তারা ক্ষমতায় যেতে পারেন তাহলে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবে। যারা মানুষের পিঠের চামড়া তুলে ফেলতে চায়, তাদের হাতে দেশ তুলে দিতে পারি না।
উত্তর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সমীর চন্দ। সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা আকবর আলী চৌধুরী, রেজাউল করিম রেজা।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম