১০ মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৯৭ জনের মৃত্যু
২০ নভেম্বর ২০২২ ১২:৪৩
ঢাকা: দেশে গত বছরের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ২০০৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৯৭ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও ১২৮৬ জন।
রোববার (২০ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন’ এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় এবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ২১.১৭ শতাংশ। একইসঙ্গে প্রাণহানিও বেড়েছে ১৯.২৮ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১৬৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৫৮ জন নিহত হয়েছিলেন।
নিহতদের মধ্যে ১৬.৫৪ শতাংশ (৩৪৭ জন) ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী এবং ৭৩.১০ শতাংশ (১৫৩৩ জন) ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী। দুর্ঘটনায় ৭৬৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন, অর্থাৎ ৩৬.৪৩ শতাংশ। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ৯২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৪.৩৮ শতাংশ।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ৩৭৪টি (১৮.৬৭%), মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২৯টি (৩১.৪০%), মোটরসাইকেলে অন্য যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৯৫৮টি (৪৭.৮২%) এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২টি (২.০৯%)।
দুর্ঘটনাসমূহ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮৩৭টি (৪১.৭৮%) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী। বাসচালক দায়ী ৮.৪৩% (১৬৯টি দুর্ঘটনা), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি চালক দায়ী ৩৭.০৪% (৭৪২টি দুর্ঘটনা), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস চালক দায়ী ২.৭৯% (৫৬টি দুর্ঘটনা), থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-নসিমন-ভটভটি-টমটম) চালক দায়ী ৫.৯৪% (১১৯টি দুর্ঘটনা), প্যাডেল রিকশা ও বাইসাইকেল চালক দায়ী ০.৮৪% (১৭টি দুর্ঘটনা) এবং পথচারী দায়ী ৩.১৪% (৬৩টি দুর্ঘটনা)।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬৯৫টি জাতীয় মহাসড়কে, ৮৭৯টি আঞ্চলিক সড়কে, ৩২৯টি গ্রামীণ সড়কে এবং ১০২টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩,৫৬১টি। মোটরসাইকেল ২,১৩৩টি, বাস ২১৪টি, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ৭৫৬টি, ড্রামট্রাক-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ইত্যাদি ১২৯টি, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার ১০৩টি, থ্রি-হুইলার ২০৭টি এবং প্যাডেল রিকশা ও বাইসাইকেল ১৯টি।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৩.১৪%, সকালে ২৬.৮০%, দুপুরে ১৬.৩৭%, বিকালে ১৯.৬৭%, সন্ধ্যায় ১০.৬৩% এবং রাতে ২৩.৩৬%।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণসমূহ বিশ্লেষণে ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন’ কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো, অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয়ে সহজলভ্যতা ও চালনায় বাধাহীন সংস্কৃতি, মোটরযান চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা, বাস-ট্রাকসহ দ্রুতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা ইত্যাদিকে দায়ী করেছে।
সারাবাংলা/এমও