খেলতে এলে খেলা হবে— সমাবেশে বার্তা আওয়ামী লীগের
২০ নভেম্বর ২০২২ ২১:০৯
ঢাকা: আন্দোলনের নামে রাজপথে সরকারবিরোধী অরাজকতা, নৈরাজ্য সন্ত্রাস সৃষ্টির অপচেষ্টা করলে রাজপথে খেলা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বার্তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলেন, সরকারবিরোধী কর্মসূচির নামে রাজপথে খেলতে এলে খেলা হবে। ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি নিয়ে তারা মুখে অস্বীকার করলেও অন্তরে কিন্তু তাদের ভিন্ন কৌশল। তারা ঠিকই রাজপথ দখলে আসবে। সেই দখলের বিরুদ্ধে খেলা হবে।
আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে সতর্কভাবে। কেউ খেলতে এলে জবাব দেওয়া হবে। বাংলাদেশে নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পালাবদলের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে ঠিক হবে কারা ক্ষমতায় থাকবে, কারা চলে যাবে।
রোববার (২০ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর উত্তরার মাসকট প্লাজার সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশ ও শান্তি মিছিল পূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতারা এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিএনপি জামায়াত ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সন্ত্রাস ও ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার পরে উত্তরায় এই সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান এমপি, মতিউর রহমান মতি, দফতর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পীসহ অনেকে।
সমাবেশের কারণে উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে যানজট ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। যানজট ভোগান্তির বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যের মধ্যেই ইঙ্গিত করেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমও যানজট ভোগান্তির জন্য জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের জবাব দিতেই রাজপথে নিরুপায় হয়ে সমাবেশ করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সমাবেশে বিলম্বে আসার কারণ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। যে কারণে আমি মোটরসাইকেলে অনেক দূর পথ আসছি। পুলিশ আমাকে নিয়ে এসেছে। না হলে মিটিংয়ে আসতে পারতাম না।’
এ সময় শান্তি সমাবেশের বিক্ষোভ মিছিলটি মাসকট প্লাজা হয়ে আমিন টাওয়ারের দিকে রওনা করে। মিছিল শুরুর পূর্বে ওবায়দুল কাদের নিজে স্লোগান ধরে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেন।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে। হবে খেলা। ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে। খেলা হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে, খেলা হবে। খেলা হবে রাজপথে। খেলা হবে নির্বাচনে, মোকাবিলা হবে আগামী ডিসেম্বরে। ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস, বঙ্গবন্ধুর বিজয় চেতনার মাস ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার বিজয় চেতনার মাসে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল ভাই, বড় বড় কথা বলছেন? তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফখরুল নাকি তৃতীয়বার স্বাধীনতা আনবে। বাংলাদেশ কি দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছিল। বাংলাদেশ কি তৃতীয়বার স্বাধীন হবে? এরা স্বাধীনতার শত্রু। বিএনপি স্বাধীনতার শত্রু। এদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। রাজনৈতিকভাবে ওদের মোকাবিলা করা হবে।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এই গণতন্ত্র বিএনপি গিলে খেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ গিলে খেয়েছে। স্বাধীনতার আদর্শ ঘিরে খেয়েছে। আইনের শাসন গিলে খেয়েছে। আইনের শাসন গিলে খেয়েছে। আরেকবার ক্ষমতা পেলে বিএনপি বাংলাদেশ গিলে খাবে। খেলার বিকল্প নেই; খেলা মানে পাল্টাপাল্টি নয়। খেলা মানে মারামারি নয়। আগুন নিয়েএলে খেলা হবে। আগুন নিয়ে খেলতে আসেন, খেলা হবে। কাঁচপুরের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী ফলক রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দিয়েছে, এরা কারা? এই আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হয়ে থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাঁশের লাঠিতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যারা রাস্তায় আসে, তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আগুন নিয়ে খেলতে দেব না। এই বাংলার মাটিতে আগুন নিয়ে খেলতে দেব না। লাঠি নিয়ে খেলতে দেব না। রাজনীতি রাজনৈতিকভাবে আমরা মোকাবিলা করতে চাই। যদি খেলার নিয়ম ভঙ্গ করেন তাহলে খবর আছে। ফখরুল সাহেব কী বলে? আমরা এখন আর লাল কার্ড দেখাব না? আমরা এখন পিছুটান। ১০ তারিখে আমরা আর বিজয় মিছিল করব না। এখন অস্বীকার করে? অস্বীকারটা মুখে করে অন্তরে কিন্তু তাদের এটা কৌশল। তারা ঠিকই রাজপথ দখলে আসবে, সেই দখলের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে সতর্কভাবে। কেউ খেলতে এলে জবাব দেওয়া হবে।’ আপনারা প্রস্তুত হয়ে যান বলেন ওবায়দুল কাদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউকে ভয় পান না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভয় দেখাচ্ছেন? ২০ বার মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে এসেছেন শেখ হাসিনা। আল্লাহ ছাড়া তিনি কাউকে ভয় করেন না। ভয় দেখাবেন না, আওয়ামী লীগ বেঁচে আছে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সমাবেশের প্লাবন-উচ্ছ্বাসে বিএনপির সন্ত্রাসীসহ ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি সারাদেশে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যাচার করে না ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। কিছু কিছু মিডিয়া কিছু বুদ্ধিজীবী কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিএনপির সমাবেশ দেখে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া অনাথের টাকা চুরি করে যিনি জেলে থাকার কথা জননেত্রী শেখ হাসিনার উদার মহানুভব মানসকিতার কারণে ওই গুলশানের বাসায় থাকছেন। আর তার পুত্র তারেক জিয়া আজকে নির্বাসনে দিন কাটাচ্ছেন। বিএনপির সমাবেশে কিছু লোকজন দেখে এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ নেই। আজকে উত্তরার জনসমাবেশ দেখে যান। এ সমাবেশ প্রমাণ করে সিলেট অঞ্চলের প্রত্যেকটা উপজেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই ধরনের সমাবেশ করতে পারে।’
বিএনপি শাসনামলের সন্ত্রাস দুর্নীতি অরাজকতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কিছু বিভ্রান্ত কর্মীদের বলতে চাই, এমন দুর্নীতিপরায়ণ নেতাকে নিয়ে আর নাচবেন না। বেগম জিয়াও দুর্নীতির কারণে জেল হওয়ার কারণে নির্বাচন করতে পারবেন না। নেতৃত্বহীন একটি দল।’
বঙ্গববন্ধু কন্যা জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে মির্জা আজম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনি বিএনপির জিয়াউর রহমান তার ছেলে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার করার জন্য লন্ডনে বসে প্রতিদিন ষড়যন্ত্র করে। সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য মির্জা ফখরুলরা আজকে কাজ করে যাচ্ছে। তাই ১০ ডিসেম্বরে পর তারা ঢাকায় খালেদা জিয়ার নির্দেশে নাকি বাংলাদেশ চলবে?’ সেটি মিথ্যা প্রমাণিত করার লক্ষ্যেই ঢাকা-১৮ আসনের মানুষরা একত্রিত হয়েছে। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী দিনে সরকারবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশের সঞ্চালক এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত যে ষড়যন্ত্র করছে। বহির্বিশ্বে যখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে; সেই মুহূর্তে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে রাজনীতির মাঠ ঘোলা করতে চায়। ভুল পথে ষড়যন্ত্র করে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে চায়। এটি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। তাই আজকে ঢাকার উত্তরার সমাবেশে লাখ লাখ জনতা বিএনপি-জমায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শামিল হয়েছে।’
সারাবাংলা/এনআর/একে