ঢাকা-এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতুর চার লেন প্রকল্পে অগ্রগতি নেই
২২ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২৫
টাঙ্গাইল: ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু-মহাসড়কে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলের দূরপাল্লার যাত্রীদের সড়ক যোগাযোগ উন্নত করার লক্ষ্যে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত চার লেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। তবে এ কাজের কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রায় ৬০১ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান এই প্রকল্পের কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজে অনভিজ্ঞ লোকজন সাব ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় মাটি নিয়ে বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের কাজ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব কারণে মহাসড়কে চলাচলকারী দুরপাল্লার যাত্রীদের মাঝে মারাত্মক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ দরপত্র অনুযায়ী অগ্রগতি না হলে আগামী রোজার ঈদে এ মহাসড়কের যে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা নিয়ে এখনি উদ্বিগ্ন দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এমনিতেই মহাসড়কে সারাবছর সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি যানজট লেগেই থাকে। গাজিপুরের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের সুবিধা পেলেও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার দুই লেনের মহাসড়কের কারনে এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এ দুর্ভোগ থেকে দুরপাল্লার যাত্রীদের রেহাই পেতে ওই ১৩ কিলোমিটার অর্থাৎ এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধুসেতু পর্যন্ত চার লেনে উন্নীত করতে উদ্যোগ নেয় সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৬০১ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রকল্পের কাজ পেয়েছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায় প্রায় দেড় বছর আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চার লেনের এ সড়কের কাজে এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। উপরন্তু তারা নিজেরা মাটি ভরাটের কোন কাজ না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদেরকে সাব ঠিকাদার নিয়োগ
দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ কালিহাতী উপজেলার গোয়ালিয়াবাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী, আলীমুদ্দিন, মাসুদ মেম্বার, মোহন, মনিরুজ্জামান ও জহির নামের এসব সাব ঠিকাদার মাটি ভরাটের কাজ পেয়েছে। এসব ঠিকাদার কাজ পাবার পর থেকে প্রকল্পের মাটি নিয়ে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়েছে। এসব সাব ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ার কারনে এবং বেশি মাটি তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকার কারনে মাটির দাম নিয়ে বিশৃংখলার সৃষ্টি করছে
ইচ্ছাকৃতভাবে।
এদিকে ধীরগতিতে সড়ক নির্মান কাজ চলার কারনে এ মহাসড়কে চলাচলকারী দুরপাল্লার যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ যেভাবে ধীরগতিতে কাজ এগুচ্ছে তাতে মহাসড়কের কাজ শেষ করতে কত বছর যে সময় লাগবে তা আমরা বুঝতে পারছিনা। সরকারের এ বিষয়ে নজর দেয়া উচিৎ বলে মনে করছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পে ১৩ দশমিক ৬ কিমি মহাসড়কে ১টি ফ্লাইওভার, ৮টি ব্রিজ, ১০টি কালভার্ট ও ২টি আন্ডারপাসসহ একটি সার্ভিস লেন রয়েছে। প্যাকেজ-৫ এর অধীন এ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬ কিমি সড়কের ব্যায় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০১ কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কটির দক্ষিণ পাশে রাস্তা প্রসস্থ করনের কাজ শুরু করেছে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের পক্ষে তাদের নিয়োজিত সাব ঠিকাদারেরা। তারা খুবই ধীরগতিতে বলগেটের মাধ্যমে পাইপযোগে প্রকল্পে বালুমাটি ফেলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আব্দুল মোনেম লিমিটেডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন আগামী ২০২৪ সালে জুন মাসে কাজটি শেষ করার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর উত্তরবঙ্গের ১৭টিসহ মোট ২৩টি জেলার গাড়ি ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করে। এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। গাড়ির তুলনায় মহাসড়কটি সম্প্রসারিত না থাকায় প্রতিদিনই যানজটসহ দুর্ঘটনার কবলে পরে প্রাণ দিতে হতো যাত্রী ও চালকদের। বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে এই সড়কে জন ভোগান্তি বেড়ে যায় বহুগুণে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার সড়কটি চার লেনে উন্নতি করণের প্রকল্প হাতে নেয়।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলেও বর্তমানে মহাসড়কের পুরো কাজই শেষ হয়েছে। ফলে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত কোনো প্রকার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না যাত্রী ও চালকদের। একই সঙ্গে এই সড়ক দুর্ঘটনার হারও কমে গেছে।
মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজের ধীরগতি ও প্রভাবশালী স্থানীয়দেরকে সাব ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় অফিসের প্রজেক্ট ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা। আপনারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। একই বিষয়ে ওই অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুল হাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাত করেননি।
এ ছাড়াও আব্দুল মোনেম লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খানের সাথে তার মোবাইলে বার বার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আহসান মাসুদ বাপ্পী জানান, নির্দিষ্ট সময়ে এ মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ করার আশা করছি। মহাসড়ক নির্মাণ কাজের ব্যয় বাড়বে কি না সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত পয়েন্ট ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মূল কাজ শুরু হতে আরও সময় লাগবে।
সারাবাংলা/ইআ