চুরি হওয়া ৩ শিশু ফিরে পেল মায়ের কোল
২৩ নভেম্বর ২০২২ ২১:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে পৃথকভাবে চুরি হওয়া তিন শিশু ফিরে পেয়েছে তাদের মায়ের কোল। নগরীর ইপিজেড ও বন্দর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই শিশুকে লক্ষ্মীপুর ও ফেনী থেকে উদ্ধার করে। আরেক শিশুকে আদালতের নির্দেশে তার মায়ের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ২৭ অক্টোবর রাতে নগরীর ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকায় বাসা থেকে আরিফ নামে সাত মাস বয়সী এক শিশু চুরি হয়। তার মা পোশাক কর্মী আমেনা বেগম বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
ইপিজেড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল করিম সারাবাংলাকে জানান, মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার মান্দারী পূর্ববাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রোমানা আক্তার (২৮) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করে তার হেফাজত থেকে শিশু আরিফকে উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, চুরির ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে শনাক্ত করে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এরা হলো- কামরুল হাসান খান (১৯), তানজিলা আক্তার (১৮), মো. রুবেল (২৫), নাজিম উদ্দিন মুন্না (২৩), মিজানুর রহমান (২৫) ও তার স্ত্রী সীমা আক্তার (২৫)।
ওসি আব্দুল করিম বলেন, ‘গ্রেফতার ছয়জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে শিশুটির অবস্থান শনাক্ত করতে প্রায় একমাস সময় লেগেছে। গ্রেফতার ছয়জন সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা শিশুটিকে চুরি করে নিঃসন্তান রোমানার কাছে বিক্রি করেছিল।’
এদিকে, নগরীর ফ্রি-পোর্ট এলাকা থেকে চুরি হওয়া তিন বছর বয়সী মেয়েশিশু জেমিকে টানা ৬০ দিনের চেষ্টায় ফেনী থেকে উদ্ধার করেছে বন্দর থানা পুলিশ। গত ২২ সেপ্টেম্বর শিশুটিকে কৌশলে নানীর কাছ থেকে নিযে পালিয়ে যায় জয়নাল আবেদীন সুমন (২৭) নামে এক যুবক। পুলিশ ওই যুবককে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার বারইয়ারহাট এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যে শিশুটিকে ফেনী সদর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, জেমিকে নিয়ে তার নানী ফেনী থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম নগরীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। তিনি নগরীর কলসী দিঘীর পাড়ে পোশাককর্মী মেয়ের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলেন। ট্রেনে অপর যাত্রী সুমনের সঙ্গে তার আলাপ হয়। সুমন জেমিকে কোলে নিয়ে ট্রেনের ভেতরে ঘোরাঘুরি করে। সুমন কৌশলে জেমি ও তার নানীর গন্তব্য জেনে নেয়। ট্রেন থেকে নেমে সুমনও একই এলাকায় যাবার কথা বলে তাদের সঙ্গী হয়।
বাসে স্টেশন থেকে ফ্রি-পোর্ট এলাকায় নেমে সুমন জেমিকে কোলে নিয়ে এবং নানী পেছনে হাঁটছিল। এক পর্যায়ে তার নানী দেখেন, সুমন জেমিকে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সুমন অদৃশ্য হয়ে যায়। এ ঘটনায় জেমির বাবা নরসিংদী থেকে এসে নগরীর বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমরা সুমনকে শনাক্ত করি। কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তার অবস্থানের তথ্য পেয়ে অভিযান চালাই। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার তাকে বারইয়ারহাট এলাকায় পাওয়া যায়। তার দেওয়া তথ্যে ফেনী সদর এলাকার বাসিন্দা আমেনা আক্তারের হেফাজত থেকে জেমিকে উদ্ধার করি। সুমন জানায়, সে তার শ্যালিকার মেয়ে পরিচয়ে জেমিকে বিয়ের ১২ বছর পরও নিঃসন্তান থাকা আমেনা বেগমের কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল।’
এদিকে, প্রায় দেড় বছর আগে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বিক্রি করে দেওয়া এক শিশুকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ফেরত পেয়েছেন তার মা রুমা আক্তার। তাদের বাড়ি উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে। উদ্ধার হওয়া শিশুটির বয়স তিন বছর।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঞা শিশুটিকে তার মায়ের হেফাজতে দেয়ার নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রাম জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, ২০২১ সালের ২৫ জুলাই দেড় বছর বয়সী ছেলে মিনহাজকে তার ভাইয়ের স্ত্রী শিরিন আক্তারের কাছে রেখে নগরীতে চাকরির সন্ধানে যান মা রুমা আক্তার। কয়েকদিন পর ফিরে সন্তানকে না দেখে তিনি জানতে পারেন, শিরিন আক্তার তাদের নিকটাত্মীয় নিঃসন্তান তসলিমা বেগমের কাছে মিনহাজকে বিক্রি করে দিয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যের কাছে বিচার দিয়ে তিনি শিশুটিকে ফেরত পাননি।
এরপর রুমা আক্তার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করেন। শুনানির পর আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। বাদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দাখিল করেন। শুনানি শেষে রুমা বেগমের সন্তান প্রমাণ হওয়ায় আদালত মিনহাজকে তার কাছে ফেরত দেয়ার আদেশ দেন।
দেড় বছর পর সন্তানকে ফিরে পেয়ে রুমা আক্তার আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বলে জানান জেলা পিপি।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম