‘উন্নয়ন রক্ষায় শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় আনতে হবে’
২৪ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৩৩
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্জন যদি বাঁচাতে চান তাহলে আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে যশোর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জনসভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। যশোরের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা প্রদর্শন করেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে।
যশোরের জনসভাকে জনতার মহাসমুদ্র আখ্যায়িত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিকে বিশ্বাস করেন? বেঈমানের দল। বিশ্বাসঘাতকের দল। তারা ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। খুনি জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরষ্কৃত করেছেন। খুনিদের দায়মুক্তির জন্য আইন করেছে। দলটি ৩রা নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। তারা ২১ আগস্ট আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। তারা কারা? তারা হলো বাংলাদেশ নালিশ পার্টি, বিএনপির আরেক নাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘পলাশীর মীরজাফর এখানে খন্দকার মোশতাক। পলাশীর সেনাপতি ইয়ার লতিফ আর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বাংলাদেশে সেনাপতি জিয়া বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাসঘাতকের অপর নাম জিয়াউর রহমান। এই জিয়াউর রহমান যদি এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে না থাকত, কারও সাহস ছিল না বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।’
বিএনপিকে বিশ্বাস ঘাতকের দল দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় যখন ছিল তখন বিদ্যুৎ গিলেছে, রিজার্ভ গিলেছে, গণতন্ত্র গিলেছে, ভোট চুরি করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। দিলটি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে লুণ্ঠিত করেছে। স্বাধীনতার আদর্শকে তারা পদদলিত করেছে। তারা যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে গোটা দেশ গিলে খাবে।’
খেলা হবে, খেলা হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুঃশাসনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। লুটপাট ও হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
‘সামনে ডিসেম্বর মাস প্রস্তুত হয়ে যান। যশোরের মানুষ, খুলনার মানুষ প্রস্তুত হয়ে যান। মির্জা ফখরুল এখন বড় বড় কথা বলছেন। গণতন্ত্র হত্যাকারীদের মুখে গণতেন্ত্রের বুলি শোভা পায় না। বিএনপি কোনো মুখে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথা বলে। বিএনপি কোন নির্যাতনের কথা বলে। শেখ হাসিনা ছাড় দিচ্ছেন এখন। আগুন নিয়ে খেলতে আসলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেন আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক।
তিনি আরও বলেন, ‘ফখরুলের মন খারাপ, বুকে জ্বালা— শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করেই ফেলল। এখন যশোর থেকে ঢাকা যেতে আড়াই ঘণ্টা লাগে। আগে লাগত ৮-১০ ঘণ্টা। কি চান আর? কালনা সেতু পায়রা সেতুও হয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা কত সহজ করে দিয়েছে এই সরকার।’
যশোর ও খুলনার রাস্তার প্রসঙ্গ তুলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের উদ্দেশে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আর এক মাস সময় দিলাম। যশোর-খুলনা রাস্তা ঠিক না হলে খবর আছে। অন্য কোথাও আর কোনো সমস্যা হবে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অর্জন যদি বাঁচাতে চান, শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে যশোর বিমান বাহিনী একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন) ২০২২’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পাসিং আউট কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে বিকেলে টানা মেয়াদে সরকারে থেকে দেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত খাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন অঙ্গীকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জয়গান নিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসভায় ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরেই পদ্মা সেতু, মধুমতি সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে যশোরসহ ওই জনপদের বিভিন্ন জেলার মানুষ বিভিন্নভাবে উপকারভোগী হয়েছে। তাই একদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্যদিকে করোনাকালের ঘরববন্দির ঘেরাটোপ থেকে জনতার কাতারে সরকার ও দলের বার্তা পৌঁছে দিতে ভোটের মাঠে নামলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, পীযূষ ভট্টাচারর্যসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস