Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশুকে ৬ খণ্ড করে সাগরে ভাসাল ‘ক্রাইম পেট্রল’ আসক্ত তরুণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২২ ১৭:১৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১৯ বছর বয়সী তরুণ আবির আলী। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রল’ আর ‘সিআইডি’ দেখে রপ্ত করে লৌমহর্ষক অপরাধ সংঘটন এবং আড়ালের কৌশল। কথা বলে এমনভাবে, যেন সে পুলিশ বাহিনীর সদস্য।

অপরাধ সংঘটনের দক্ষতা সে প্রয়োগ করে বাড়ির মালিকের মেয়ে ৪ বছর ১১ মাস বয়সী আলীনা ইসলাম আয়াতের ওপর। এক বাসায় শ্বাসরোধ করে মেয়েটিকে হত্যা করে আবির। সেই লাশ প্যাকেটে মুড়িয়ে আরেক বাসায় নিয়ে কেটে ছয় টুকরা করে। ছয়টি খণ্ড আলাদা-আলাদা প্যাকেটে ভরে তিনটি ফেলে সাগরে আর নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে। ভাটার টানে চলে যায় আয়াতের মাংসপিণ্ডভর্তি প্যাকেটগুলো, দুইদিন খুঁজেও যেগুলোর সন্ধান মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

নৃশংস খুনের পর এবার অপরাধ আড়ালের দক্ষতা প্রয়োগ শুরু করে আবির। নিজেকে সাবলীল রেখে অন্তঃত ১০ দিন সবার চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। তবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাতে আবিরকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর মধ্য দিয়ে আয়াতের নিখোঁজ এবং হত্যার রহস্যের উদঘাটন হয়।

কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পেরেছে- আয়াতের বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশে আবির ফুটফুটে, চঞ্চল শিশুটিকে লৌমহর্ষকভাবে খুন করেছে। তবে এই দাবি আরও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

গত ১৫ নভেম্বর বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল আলীনা ইসলাম আয়াত। নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা ও সাহিদা আক্তার তামান্না দম্পতির মেয়ে আয়াত। তিনতলা ভবনের মালিক সোহেলের ওই এলাকায় একটি মুদির দোকান আছে। আয়াত স্থানীয় তালীমূল কোরআন নূরানী মাদরাসার হেফজখানার ছাত্রী ছিল।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার আবির আলী নয়ারহাট এলাকার সোহেল রানার ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া আজহারুল ইসলামের ছেলে। তাদের বাড়ি রংপুর জেলায়। একসময় পোশাক কারখানায় চাকরি করলেও গত ছয় মাস ধরে বেকার আবির বখাটে প্রকৃতির বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা সারাবাংলাকে জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবিরের বাবা আজহারুল ইসলাম এবং মা আলো বেগমের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। আলো বেগম ছেলে আবির ও মেয়ে আঁখি আক্তারকে নিয়ে ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের পকেটবাজার এলাকায় আলাদা বাসা নেন। তবে আবিরের দুই বাসাতেই যাতায়াত ছিল। বাবার বাসা থেকে বিভিন্নসময় সে মায়ের বাসায় নিয়ে যেত।

আবির আলীর জন্ম, বেড়ে ওঠা সোহেল রানাদের ভাড়া বাসায়। আয়াত তাকে ‘চাচ্চু’ হিসেবে সম্বোধন করত। দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা, যাতায়াত। এলাকায় আয়াতের সমবয়সী খেলার সাথীরাও আবিরকে ‘চাচ্চু’ হিসেবে সম্বোধন করত।

পরিকল্পনা, খুন এবং কেটে টুকরো করা:

১৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটা। বাসার সামনে রাস্তায় সাথীদের নিয়ে খেলছিল আয়াত। আবির বাবার বাসা থেকে বের হয়ে আয়াতকে কোলে নেয়। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। আয়াতকে কোলে নিয়ে বাসার দিকে নিয়ে যায়। আবির যখন কোলে নিয়ে রুমে ঢোকানোর চেষ্টা করছিল, চটপটে আয়াত তখন চিৎকার দেয়। ভেতরে গিয়ে আয়াতের কন্ঠনালী চেপে ধরে। সেখানেই প্রাণ হারায় শিশুটি।

পিবিআই হেফাজতে থাকা আবির আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার শরীরে যত শক্তি আছে, সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরে আয়াতকে রুমে নিয়ে যাই। রুমে ঢোকানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই তাকে খাটের ওপর ফেলে গলাটিপে মেরে ফেলি। এরপর দুটি বড় ব্যাগের মধ্যে একটিতে লেপ-কম্বল এবং আরেকটিতে লাশ ঢুকিয়ে বাইরে বের হই। কেউ সন্দেহ করেনি। রিকশায় উঠে পকেটবাজারে আমাদের বাসায় চলে যাই। সেখানে বাথরুমের ওপর তাকের ভেতরে বস্তাসহ লাশ ঢুকিয়ে রাখি।’

‘আমি আয়াতের মায়ের বিয়েতে গিয়েছি, খেয়েছি। আয়াতকে আমরা কোলেপিঠে করে বড় করেছি। যখন গলাটিপে তাকে খুন করছিলাম, তখন আমার গা কাঁপছিল।’- পিবিআই সদস্যদের জানায় আবির

আয়াত নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনে গঠিত পিবিআই টিমের পরিদর্শক (মেট্রো) ইলিয়াস খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবির যখন দুটি বস্তা নিয়ে বাসায় ঢুকছিল, তখন তার মা ও বোন বাসায় ছিল। যেহেতু মাঝে মাঝে আবির তার বাবার বাসা থেকে বিভিন্ন মালামাল আনত, সেটা ভেবে তাদের মধ্যে কোনো সন্দেহ হয়নি। কিছুক্ষণ পর আবিরের মা ও বোন দোতলায় গিয়ে প্রতিবেশিদের সঙ্গে আড্ডায় বসেন। আবিরও সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে। এরপর আবার নয়ারহাট এলাকায় বাবার বাসায় যায়। ততক্ষণে আয়াতকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। আবির নিজেও কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির অভিনয় করে।’

আবিরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) মর্জিনা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আয়াতকে কোলে নিয়ে রুমে ঢোকার সময় তার স্যান্ডেলগুলো পড়ে গিয়েছিল। তাড়াহুড়োর মধ্যে আয়াতের লাশ নেয়ার সময় স্যান্ডেলগুলো নেয়ার কথা আবিরের মনে ছিল না। পরে আবার সেখানে এসে আয়াতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যখন খোঁজাখুজির অভিনয় করছিল, তখন সুযোগ বুঝে স্যান্ডেলগুলো নেয়। সেগুলো আয়াতের বাসা সংলগ্ন একটি দেয়ালঘেরা কবরস্থান আছে। দেয়ালের ওপর দিয়ে সেগুলো কবরস্থানের ভেতরে একটি পেয়ারা গাছের নিচে ফেলে দেয়।’

এদিকে নয়ারহাট থেকে সন্ধ্যার পর আবির আবার পকেটবাজার এলাকায় চলে আসে। সেখানে একটি দোকান থেকে একটি এন্টিকাটার, পলিব্যাগ ও কচটেপ কিনে রাত ৯টার দিকে বাসায় যায়।

দোকান থেকে এসব পণ্য কেনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে পিবিআই পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘বাসায় ফিরে আবির তার মা ও বোনকে আয়াত নিখোঁজের তথ্য দিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নয়ারহাট পাঠায়। খালি বাসায় সুযোগ বুঝে ব্যাগ থেকে লাশ বের করে প্রথমে এন্টিকাটার দিয়ে কাটার চেষ্টা করে। না পেরে ঘরের বটি দিয়ে লাশ ছয় টুকরা করে। এন্টিকাটার ও বটি আবিরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা উদ্ধার করেছি।’

আয়াতের লাশ কেটে টুকরো করার বিবরণ দিয়ে গ্রেফতার আবির আলী সারাবাংলাকে জানায়, বাসায় গিয়ে তাক থেকে লাশের ব্যাগ নামিয়ে সে বাথরুমে নিয়ে যায়। লাশ বের করে মাথা থেকে গলা পর্যন্ত এক খণ্ড, দুই হাত দুই খণ্ড, গলার নিচ থেকে উরু পর্যন্ত একখণ্ড এবং দুই পা দুই খণ্ড করে কেটে ফেলে। খণ্ডগুলো ছয়টি আলাদা ব্যাগে ঢুকিয়ে বাথরুমের তাকের ওপর রেখে দেয়। বাথরুমে রক্ত পানি দিয়ে পরিস্কার করে ফেলে।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, রাত ১০টার দিকে দাদা মনজুর আলম নাতনি আয়াতকে খুঁজতে পকেটবাজারে আবিরদের বাসায় যায়। তখন আবির বাসায় ছিল। সে মনজুরের সঙ্গে থেকে ওই এলাকায় কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে। পরে মনজুর বাসায় চলে গেলে আবির তার বাসায় ফিরে যায়। রাতে তার মা ও বোন বাসায় ফিরে। কিন্তু আবির বাথরুমে গোসল করতে থাকায় দরজা ‍খুলতে প্রায় আধাঘণ্টা দেরি হয়। বাসায় ঢুকে তারা কিছুই বুঝতে পারেনি। রাতে ভাত খেয়ে তিনজন ঘুমিয়ে পড়ে। বাথরুমের তাকের ওপর ছিল আয়াতের খণ্ডবিখণ্ড লাশ।

পিবিআইয়ের এসপি (মেট্রো) নাইমা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘লাশের খণ্ডগুলো থেকে যাতে রক্ত বের না হয়, সেজন্য কচটেপে মুড়িয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে আবারও ভালোভাবে কচটেপে মোড়ানো হয়। ব্যাগের ওপরে পারফিউম ছিটিয়ে দেয়। রুম স্প্রে করে পুরো বাসায়। বাথরুমে রক্ত ভালোভাবে পরিস্কার করে নিজেও গোসল করে। এভাবে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করেছে আবির।’

লাশের টুকরো সাগরে ভাসিয়ে অপরাধ আড়ালের কৌশল:

১৬ নভেম্বর ভোরে মা-বোনের অজ্ঞাতে তিন ব্যাগে থাকা লাশের তিনটি খণ্ড একটি ব্যাগে নিয়ে নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে সেগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেয়। এরপর আবার বাসায় ফিরে আসে। রাত ৯টার দিকে বাকি তিনটি খণ্ড ব্যাগে নিয়ে ফেলা হয় আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন নালায় স্লুইচগেটের মুখে।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে আবিরকে নিয়ে লাশ ভাসানোর স্থানগুলোতে যায় পিবিআই টিম। সে কোথায়, কখন, কিভাবে লাশের খণ্ডগুলো ফেলেছে তার বিস্তারিত বিবরণ পিবিআই কর্মকর্তাদের দেয়।

আবির আলী জানায়, ১৬ নভেম্বর সকালে তিনটি লাশের খণ্ড নিয়ে বাসা থেকে হেঁটে আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় যায়। তখন সাগরে ভাটার টান ছিল। সে দ্রুত তিনটি ব্যাগে তিনটি খণ্ড সাগরে ফেলে দেয় এবং সেগুলো পানির টানে নেমে যায়। তিনটি ব্যাগে গলার নিচ থেকে উরু পর্যন্ত একটি ব্যাগে এবং দুইটি পা আলাদা দুইটি ব্যাগে ছিল।

এরপর রাত ৯টায় বাকি তিনটি খণ্ড নিয়ে যায় আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে একটি নালায় স্লুইচগেটের মুখে তিন খণ্ডের তিন প্যাকেট ফেলে দেয়। পানির স্রোতে সেগুলো নালা দিয়ে সাগরে চলে যায়। একই স্থানে আবির আয়াতের হিজাব, ওড়নাসহ পোশাক একটি প্যাকেটে ভরে ফেলে দেয়।

পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আটকের পর লাশের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিল আবির। তবে বন্দর থেকে সংগ্রহ করা একটি ফুটেজে আমরা তাকে কালো একটি ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যেতে দেখি। সেই ব্যাগ আমরা তার বাসায় তল্লাশি করে পাইনি। তখন আমরা তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে একপর্যায়ে সে পুরো ঘটনার বিবরণ আমাদের দেয়।’

যেভাবে শনাক্ত হল আবির আলী:

পিবিআইয়ের এসপি (মেট্রো) নাইমা সুলতানা সারাবাংলাকে জানান, আয়াতের দাদা ইপিজেড থানায় দায়ের হওয়া একটি নিখোঁজ জিডি নিয়ে তাদের কাছে সহযোগিতা চান। তাৎক্ষণিক একটি টিম গঠন করা হয়। ১৮ নভেম্বর থেকে তদন্তে নামেন ওই টিমের সদস্যরা। তবে তিনদিন ধরে এলাকায় গিয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।

২১ নভেম্বর পিবিআই পরিদর্শক মর্জিনা আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম আয়াতের বাসায় যান। বাসার সামনে রাস্তায় খেলছিল আয়াতের সাথীরা। মর্জিনা তাদের কাছে আয়াতের বিষয়ে জানতে চান। তারা জানায়, ১৫ নভেম্বর বিকেলে আয়াতকে তারা আবির চাচ্চুর কোলে দেখেছে। সেটাকেই সূত্র হিসেবে ধরে আবিরের পরিচয় উদঘাটন করা হয়। তার বাবা ও মায়ের আলাদা বাসা শনাক্ত করা হয়। আয়াতের বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়।

পিবিআই কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা আবিরকে জিজ্ঞেস করি যে- তুমি বাচ্চা কোলে নিয়েছ, এই বাচ্চা গেল কোথায় ? সে জবাব দেয়- আমি আদর করে রেখে দিয়েছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখি, ১৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দুইটা ব্যাগ নিয়ে আবির তার বাবার বাসা থেকে বের হচ্ছে। একটা কালো ব্যাগ একটু বড় ছিল। তার বাসায় গিয়ে লেপ-কম্বলের ব্যাগটি পাওয়া গেলেও কালো ব্যাগটি পাওয়া যায়নি। তখনই আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করি যে, আবিরের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। আমরা আটক করে তাকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং একপর্যায়ে সে ঘটনা স্বীকার করে।’

ক্রাইম সিরিয়ালে আসক্ত আবির:

পিবিআইয়ের এসপি (মেট্রো) নাইমা সুলতানা সারাবাংলাকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় আবির ছিল শান্ত, স্থির যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষায় উত্তর দিচ্ছিল- আমি এভিডেন্স সরিয়ে ফেলেছি, এভিডেন্স লুকিয়ে ফেলেছি, আলামত রাখিনি।

‘আবিরের এ ধরনের কথাবার্তা শুনে বিস্মিত হয়ে যাই। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ছোটবেলা থেকে তার ক্রাইম সিরিয়ালের দেখার আগ্রহের কথা। সে নিয়মিত টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রল আর সিআইডি দেখে। কিভাবে অপরাধ করলে ধরা পড়বে না, আলামত কিভাবে ধ্বংস করতে হবে সেই কৌশল পুরোপুরি রপ্ত করা আছে তার। খুনের পর পালিয়ে না যাবার কারণ হিসেবে জানিয়েছে, পালিয়ে গেলে সবাই তাকে সন্দেহ করত।’- বলেন নাইমা সুলতানা

এদিকে ঘটনার পর আবির তার বন্ধু হাসিবকে জানিয়েছিল, আয়াতকে খুন করে সে লাশ কেটে সাগরে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু হাসিব বিষয়টি গোপন রাখায় তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পিবিআই।

কেন এই নৃশংসতা ?

পিবিআই হেফাজতে থাকা আবির সারাবাংলাকে জানায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তারা অর্থকষ্টে পড়ে। মা ও আবির দু’জনই পোশাক কারখানায় চাকরি করত। হঠাৎ দুজনের চাকরি চলে যায়। টাকার জন্যই মূলত আয়াতকে জিম্মি করে কিংবা খুন করে তার বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল নিয়েছিল।

পিবিআইয়ের এসপি (মেট্রো) নাইমা সুলতানা বলেন, ‘ছয়মাস আগে আয়াতকে টার্গেট করে আবির পরিকল্পনা করেছে। উদ্দেশ্য ছিল আয়াতের পরিবার থেকে কিছু টাকা আদায় করা। তবে আবিরের এই দাবি সত্যি কি না সেটা আরও খতিয়ে দেখা হবে।’

পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আবির তার মায়ের সেলাই মেশিন বিক্রি করে কিছু টাকা সংগ্রহ করেছিল। ৩০০ টাকা দিয়ে একটি মোবাইল কিনেছিল। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি বাংলালিংকের সীম নিজের কাছে রেখেছিল আয়াতের বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবির জন্য।’

‘আয়াতকে রুমে নেয়ার পর যখন সেই সীম মোবাইলে ঢুকিয়ে ফোন করতে গেল, তখন দেখা গেল সেটি ব্লক করা। এ অবস্থায় বাচ্চাকে ছেড়ে দিলে সে সবকিছু জানিয়ে দেবে। আবার বাচ্চাটাকে রাখবে কোথায়- এই চিন্তা থেকেই মেরে ফেলে। খুনের পর মুক্তিপণ দাবি করা যাবে ভেবেছিল। কিন্তু পরিচিত কারও মোবাইল থেকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করলে যে ধরা পড়ে যাবে, এটা সে বোঝে। সহজে তাকে শনাক্ত করা যাবে, এমন কোনো কাজ সে করেনি।’

এদিকে শুক্রবার দুপুরে আবিরকে নিয়ে পিবিআই টিম আয়াতের বাসায় যায়। সেখানে কবরস্থান থেকে স্যান্ডেল দু’টি উদ্ধারের পর আয়াতের মা তামান্না সেগুলো শনাক্ত করেন। এসময় তিনি জানতে পারেন, তার একমাত্র সন্তান আর পৃথিবীতে নেই। তিনি কান্নায় ভেঙ্গে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যান। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

সারাবাংলা/আরডি/একে/এনইউ

চট্টগ্রাম হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর