মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শনিবার, নেতৃত্ব পরিবর্তনের আভাস
২৫ নভেম্বর ২০২২ ২৩:১৭
ঢাকা: বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন ২৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। সহযোগী সংগঠনটির সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী প্রার্থী হিসাবে প্রায় ৪০জন নেত্রী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনটর শীর্ষ পদে নতুন নেতৃত্ব উপহার দিতে পারেন মূল দলের হাইকমান্ড বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সংগঠনটির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় পাঁচ বছর পর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
গত দুই বছর চলতে থাকা কোভিড পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। আগামী ২৪ জানুযারি আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনের আগে কমিটির মেয়াদ পার হয়ে যাওয়া সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম কয়েকটি সংগঠনের সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় মহিলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এদিকে সম্মেলনের সব প্রস্তুতি শেষে এখন আলোচনা চলছে আগামী নেতৃত্ব নিয়ে। নতুন কমিটিতে কারা থাকছেন বিশেষ করে সংগঠনের গুরুত্বপুর্ণ দুই পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব কে পাচ্ছেন এ বিষয়ে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবারই ঘোষণা আসতে পারে দুই শীর্ষ পদসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু পদে নাম ঘোষণা হতে পারে। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন নেতৃত্বের নামও ঘোষণা হবে। বরবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশেই দলের সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
সম্মেলন সফল করতে বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিকেলে তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নৌকার আদলে মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অন্য নেত্রীরা নেতৃত্বে আসছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
২৫ হতে ৩০ হাজার কাউন্সিলর/ডেলিগেগের উপস্থিতি ধরে সম্মেলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে আগত ডেলিগেটস ও কাউন্সিলররা সম্মেলন যোগ দেবেন। এর বাইরেও ঢাকাসহ দেশের অনেক নেতাকর্মীরা সম্মেলনে যোগ দেবেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। কমিটির মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হলেও করোনো মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয়নি। এখন এ সম্মেলনের মাধ্যমে যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে। কারণ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দলীয় সূত্রমতে, মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট। বর্তমান কমিটির সভাপতি সাফিয়া খাতুন এবারও এই পদে থাকতে আগ্রহী। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম এবার সভাপতি হিসাবে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছেন। সভাপতি পদে নেতৃত্বের দৌড়ে আলোচনায় এগিয়ে আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা এমপি। তিনি বর্তমানে সংরক্ষিত আসনে (৩০৩) মহিলা এমপি। এছাড়া সহ-সভাপতি আসমা জেরিন ঝুমু, শিরীন নাঈম পুনম, বনশ্রী বিশ্বাস স্মৃতি কনা, নাসিমা ফেরদৌসীসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া পান্না, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাত আরা হেনরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আনারকলি পুতুল, নাসরীন সুলতানা, দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন রোজীসহ আর অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।
মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া পান্না বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। এক-এগারোর সময় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। দায়িত্ব পেলে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী দিনের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে সংগঠনকে শক্তিশালি করার কাজকে এগিয়ে নিতে পারব।’
মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনারকলি পুতুল বলেন, ‘আমার বাবা দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছোটবেলা থেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে আছি। সম্মেলনে আমাকে মূল্যায়ন করা হলে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে কাজ করব। আমি মনে করি, আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসাবে আমার কোনো পিছুটান নেই। দলকে আমি সুসংগঠিত করার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করতে পারব।’
গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি তারা নিজেদের প্রস্তুতির কথাও আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অবহিত করেন।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আগে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। শুক্রবার স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগেরে সম্মেলন হবে।
সারাবাংলা/এনআর/একে