৫০০ লোককে খাইয়ে বট-পাকুড়ের বিয়ে
২৬ নভেম্বর ২০২২ ১৯:০৫
সিরাজগঞ্জ: ধুতি-টোপড়সহ কোনো আনুষ্ঠানিকতার কমতি ছিল না। সনাতন রীতি অনুসারে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে শাখা-সিঁদুর পড়ে মহা ধুমধামে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় জমায় এ বিয়ে দেখতে। এই বিয়ে উপলক্ষে প্রায় ৫০০ বেশি লোককে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়।
পরিবার তথা গ্রামের পার্থিব মঙ্গল কামনায় নিজেদের বিশ্বাস থেকেই গতকাল শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার রায় দৌলতপুরের গোপালপুর গ্রামে ব্যতিক্রমী এই বিয়ের আয়োজন করেন তাঁত মালিক শীতল সরকার। এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন পুরো গ্রামের মানুষেরা।
সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে লগ্ন, তিথি ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে বিয়ে শেষে প্রীতিভোজেরও ব্যবস্থা রাখা হয়। আয়োজক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি দূর-দূরান্তের আগত দর্শনার্থীরাও সেখানে ভিড় জমান বট-পাকুড়ের বিয়ে উপভোগ করতে।
বিয়ের আয়োজক তাঁত মালিক শীতল সরকার বলেন, ‘আমার বাড়ির আঙিনায় একটি তাল গাছ রয়েছে। পাশে প্রায় দেড় যুগ আগে সেখানে বট গাছের সঙ্গে পরবর্তীতে একটি পাকুড় গাছেরও জন্ম হয়। পাকুড় গাছ ও বট গাছের পাশাপাশি জন্ম হলে পৌরাণিক শাস্ত্র মতে একটিকে পুরুষ ও অন্যটিকে নারী বিবেচনা করে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নানা সমস্যার কারণে এতদিন এই বিয়ের আয়োজন করতে পারিনি। সেজন্য আমার পরিবারে ছোট-খাট নানা সংকট ও বিপদ প্রায়ই লেগেই থাকত। বিয়ের আয়োজনে পরিবারের লোকজন ইতিপূর্বে একাধিকবার স্বপ্নও দেখেছে। পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের সংকট কাটাতে হিন্দু ধর্মালম্বী প্রতিবেশিদের নিয়ে ওই বিয়ের আয়োজন করা হয়।’
গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা দেবাশীষ মণ্ডল মিঠুন বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই শুনছিলাম বট-পাকুড়ের বিয়ে হবে। অনেক প্রতীক্ষার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শীলত সরকারের বাড়িতে পাকুড় গাছের সঙ্গে ধুতি, পাঞ্জাবি ও মুকুট জড়িয়ে এবং বট গাছের সঙ্গে শাড়ি, শাখা, সিঁদুর ও মুকুট পরিয়ে আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।’
আরেক বাসিন্দা আনন্দ মোহন মজুমদার বলেন, বিয়েতে পাকুড় গাছকে বর ও বট গাছকে কনে সাজিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে উপলক্ষে ক’দিন থেকেই আনন্দে ডুবে ছিল গ্রামটি। আলোকসজ্জা আর ঢাকঢোলের পাশাপাশি সাউন্ড বক্সে নানা ধরনের গান বাজিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অতিথিরা। সন্ধ্যায় বিয়ের আয়োজক শীতল সরকারের বাড়িতে গ্রামের সবাই নৈশভোজেও অংশ নেন।
রায় দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানান, হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বট ও পাকড় একই স্থানে জন্ম হলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। এ কারণে শীতল সরকার বড় ধরেনর আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই বিয়ে সম্পন্ন করেন। ব্যতিক্রমী এ বিয়েতে অতিথি ছাড়াও আশপাশের গ্রাম থেকে আসা প্রায় পাঁচ শতাধিক লোককে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়েছে।
সারাবাংলা/এনএস