হত্যাকারীদের সঙ্গে কিসের ডায়ালগ— প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
২৬ নভেম্বর ২০২২ ১৯:০৫
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকে বলেন ডায়ালগ করতে হবে। আলোচনা করতে হবে কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার মতো সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে? নির্বাচন করার মতো শক্তি যদি কারও না থাকে তারা হয়তো করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে, তারা ভোট দেবে।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী প্রার্থী হিসেবে প্রায় ৪০জন জীবন বৃত্তান্ত জমা দেন। এদের মধ্য থেকে মেহের আফরোজ চুমকিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শবনম জাহান শিলার নাম ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছি। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন এই দেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু তাকে হত্যার পর খুনি আর যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব চলে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পর পর আমরা তিনবার ক্ষমতায় এসেছি। আজ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বক্তৃতায় বলেছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধীদলের নেতাও কোনোদিন হবে না, হতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না। আল্লাহতালা এ ধরনের গর্ব ভরা কথা পছন্দ করে না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায় লেগে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ পাচারকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, আইভী রহমানের হত্যাকারী তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে- এটা কেমন ধরনের কথা, সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি?’ এ সময় জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে, নির্বাচন কমিশন আছে। যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে। আর নির্বাচন করার মতো শক্তি যদি কারও না থাকে তারা হয়তো করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে। তারা ভোট দেবে।’
তিনি বলেন, ‘ভোট চুরি করলে জনগণ মেনে নেয় না। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছিল। ওই ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর দেড় মাস থাকতে পারে নাই। জনগণের আন্দোলনে খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল।’
মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ভোটের অধিকার সকলের। আমাদের নারীরা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। তার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে। আর নির্বাচনে স্থানীয় সরকারে ৩০ শতাংশ কোটা আছে। উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ- সব জায়গায় কোটা রাখা আছে। সেখানে আমাদের মেয়েরা সরাসরি নির্বাচন করতে পারে, আবার কোটার মাধ্যমেও করতে পারে। আমরা নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়ে গেলাম। যাতে এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। এই অগ্রযাত্রায় মা-বোনদেরও দায়িত্ব আছে। আপনারাও রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে কাজ করবেন। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন।’
এর আগে, বিকেলে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে সংগঠনের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তার আগে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়ান। মঞ্চে আসার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরে সম্মেলনের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। কমিটির মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হলেও করোনো মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয়নি। এখন এই সম্মেলনের মাধ্যমে যারা নেতৃত্বে এলেন তাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম