শিশু আয়াতকে হত্যার পর বীভৎসতার প্রতিবাদ খেলাঘরের
২৬ নভেম্বর ২০২২ ২২:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে খুনের পর লাশ ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসানোর বীভৎস ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে খেলাঘর। এতে খেলাঘর সংগঠকরা শিশু নির্যাতন বন্ধ ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘শিশু ন্যায়পাল’ নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির উদ্যোগে এই প্রতিবাদী মানববন্ধন হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘বিচারহীনতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শিশু খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে। এর ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত রূপ ফুটে উঠেছে। ক্রমাগত শিশু খুনের ঘটনা ঘটছে। আয়াতের হত্যাকারীকে দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি মুনির হেলালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ বসুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরজিৎ দাশ, শিল্পী শাহরিয়ার খালেদ, খেলাঘরের প্রেসিডিয়াম সদস্য রথীন সেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রোজী সেন, মহানগর কমিটির সহ সভাপতি আহমেদ খসরু, শাহজাহান চৌধুরী, চন্দন পাল, চৌধুরী জহির উদ্দিন বাবর, মহিউদ্দিন শাহ, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ইসরাত সুলতানা সুইটি, প্রীতম দাশ, সদস্য প্রকাশ ঘোষ, সুচিস্মিতা চৌধুরী, জুঁই খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক লিটন শীল, কপোতমালা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী মুন্না, নীলাম্বরী খেলাঘর আসরের সভাপতি আবু হাসনাত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর সেন নিশান, ঝিনুককুঁড়ি খেলাঘর আসরের সভাপতি বিপ্লব মল্লিক, জলসিঁড়ি খেলাঘর আসরের আহবায়ক দীপঙ্কর রুদ্র।
গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার মেয়ে চার বছর ১১ মাস বয়সী আলীনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হন। ১০ দিন পর পিবিআই আয়াতদের ভবনের ভাড়াটিয়ার ছেলে আবির আলীকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে নিখোঁজ রহস্যের উদঘাটন করে।
পিবিআইয়ের ভাষ্যমতে, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা করে আবির আলী। পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আবিরকে আয়াত ‘চাচ্চু’ বলে সম্বোধন করতো। ১৫ নভেম্বর বিকেলে বাসার সামনে থেকে আয়াতকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে আবির ঢুকে যায় তার বাবার বাসায়, যেখানে তখন কেউ ছিল না। সেখানে ১৫ মিনিটের মধ্যে শ্বাসরোধ করে আয়াতকে খুন করে আবির।
এরপর লাশ ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় নগরীর আকমল আলী সড়কের পকেটগেট বাজার এলাকায় তার মা আলো বেগমের বাসায়। মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদের পর আবির মায়ের বাসায় থাকত। তবে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যে এলাকায়, সেই বাবার বাসায়ও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আবির মায়ের বাসায় নিয়ে লাশ বাথরুমের তাকের ওপর লুকিয়ে রাখে। রাতে সেই লাশ বাথরুমে নিয়ে কেটে ছয় টুকরা করে ছয়টি ব্যাগে ভরে রাখে।
পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির।
কিন্তু মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সংগ্রহ করা সীম ব্লক থাকায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি আবির। আয়াতের খেলার সাথীদের কাছ থেকে তাকে কোলে নেয়ার তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আবিরের গতিবিধি দেখে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতারের পর লাশের টুকরো ফেলে দেওয়ার স্থানগুলো সরেজমিনে পিবিআই কর্মকর্তাদের দেখিয়ে দেয় আবির আলী।
সারাবাংলা/আরডি/একে