জঙ্গি ইস্যুতে ‘থমকে গেছে’ ফারদিন হত্যা মামলার তদন্ত
২৭ নভেম্বর ২০২২ ১০:৫০
ঢাকা: আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন খান পরশ হত্যা মামলার তদন্ত অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যা হয়েছে সেটির রহস্য বের না করে শুরু থেকে পুলিশ নানা কথা বলে মামলার মোটিভটাই চেঞ্জ করা হয়েছে। আগাম কথাবার্তা বলে মামলার গুরুত্ব হারিয়েছে।’
ফারদিনের বাবার অভিযোগ, এমনিতেই মামলার তদন্ত নিয়ে শুরু থেকেই এক ধরণের ধোঁয়াশা তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরমধ্যে তৈরি হয়েছে জঙ্গি পালানো ইস্যু। পুলিশের সব ইউনিট এমনকি মিডিয়া পর্যন্ত সবকিছু বাদ দিয়ে জঙ্গি ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছে। ফলে ফারদিন হত্যার তদন্ত একপ্রকার থেমে গেছে বলে মনে করছি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপাতত জঙ্গি ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। ফারদিন হত্যার বিষয়টি মতিঝিল বিভাগ দেখভাল করলেও তেমন কোনো তথ্য না মেলায় একটু সময় লাগছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি তদন্ত প্রক্রিয়া। কাজেই এত তাড়াতাড়ি কোনো কিছু সম্ভব নয়।’
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। ভিডিও ফুটেজ যা পেয়েছি তা সূক্ষ্ণভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা মাঠে রয়েছে তেমন কিছু পেলে আমরা জানাতে পারবো। এরমধ্যে জঙ্গি ইস্যু আসায় তদন্তকাজ কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। তবে ফারদিন হত্যার তদন্তও থেমে নেই।’
ফারদিন হত্যার ছায়া তদন্ত করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব-১ এরইমধ্যে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া বস্তির বজলু মেম্বারকে গ্রেফতার করেছে। তবে ফারদিন হত্যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা এখনো পরিস্কার করেনি র্যাব। আর সিটি শাহীন র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও ফারদিন হত্যার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা তাও পরিস্কার করে কিছু বলেনি র্যাব। তবে চনপাড়া বস্তিতে ফারদিন ঘটনার রাতে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে র্যাব।
এদিকে ফারদিন হত্যা নিয়ে দুই বাহিনীর (র্যাব ও ডিবি পুলিশ) দুই রকম তথ্যতেও বিভ্রান্তিতে পড়েছে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা। এমনকি ফারদিনের বাবাও বেকায়দায় পড়েছেন। ফারদিনের বাবা বলেন, ‘এত কিছু বুঝি না। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।’
‘ছেলে হারানোর বেদনায় আমরা ঘুমাতে পারছি না। খেতে পারছি না। ফারদিনের মা বোবা হয়ে গেছে। কতদিন ধরে খায় না। ওর মা পাগলের মত প্রলাপ বকেন। কেউ আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারল না। তোমরা কেমন মানুষ যে, খুনিদের গ্রেফতার করতে পার না। আমি কি নিয়ে বাঁচবো… কেন পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো’, বলেন ফারদিনের বাবা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পর যা হয় তাই হয়েছে। একটি ঘটনার তদন্ত শেষ না হতেই অন্য আরেকটি ঘটনা ঘটে যায়। তখন সেটি নিয়ে তদন্তকারী সংস্থাগুলো ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আগের ঘটনার তদন্ত যে শেষই হয়নি তা বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে জনবল একটা বড় সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন তো সেই সমস্যাও অনেকটা নেই বললেই চলে। ফারদিন হত্যার মামলার তদন্তের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে মনে করছি। এরপরও আশা রাখতে হয়। এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’
গত ৪ নভেম্বর ফারদিন রামপুরা থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। পরদিন ফারদিনের বাবা রানা রামপুরা থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় পুলিশ ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে গ্রেফতার করে। রিমান্ড শেষে পুলিশ জানিয়েছে, ফারদিন হত্যায় বুশরা তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি। বুশরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শিগগিরই ফারদিন হত্যার রহস্যের জট খুলবে। সঠিকটা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে পুলিশ। সব খুনের বিচার হয়েছে এই সরকারের আমলে। আমরা চেষ্টা করছি, কোনো হত্যায় রহস্য উন্মোচন বাকি থাকবে না।’
সারাবাংলা/ইউজে/এমও