ফের ধর্মঘটে লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিকরা, পণ্য ওঠানামা-পরিবহন বন্ধ
২৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ১৫ দিনের মাথায় আবারও লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছে পণ্য পরিবহনকারী নৌযানের শ্রমিকরা। বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এর ফলে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাত ১২টা থেকে কর্ণফুলী নদীর ১৭টি ঘাট এবং বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রেখেছেন নৌযান শ্রমিকরা।
চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙর থেকে সারাদেশের নৌরুটে অন্তত হাজার লাইটারেজ জাহাজ পণ্য আনা-নেওয়া করে। এসব জাহাজে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। আমদানি করা ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য নিয়ে বর্হিনোঙ্গরে আসা মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজে) থেকে পণ্য খালাস হয় লাইটারেজ জাহাজে। এরপর নৌরুটে বিভিন্ন গন্তব্যে সেসব পণ্য নিয়ে যায় লাইটারেজ জাহাজগুলো।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত ৫২টি মাদার ভ্যাসেলের মধ্যে ৩২টি থেকে পণ্য খালাস হওয়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু রাত ১২টা থেকে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় জাহাজগুলো অলস বসে আছে। কর্ণফুলী নদীতেও অলস বসে আছে শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ ও অয়েল ট্যাংকার।
বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শেখ মোহাম্মদ ঈছা মিয়া সারাবাংলাকে জানান, তিনটি মূল দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন মিলে শনিবার বৈঠক করে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদের ব্যানারে দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালনের ডাক দেওয়া হয়।
তিন দফা মূল দাবির মধ্যে আছে- নৌযান শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, মৃত্যুকালীন ভাতা ২ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ এবং ভারতের বন্দরে ল্যান্ডিং পাস দেওয়া।
মোহাম্মদ ঈছা মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি পাঁচ বছর পর পর শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো পুনর্গঠন করা হয়। কিন্তু ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। অথচ এ নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। দেশে সব পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ শ্রমিকদের বেতন পাঁচ বছর আগে যা ছিল, এখনও তাই আছে।’
ভারতের বন্দরে ল্যান্ডিং পাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতীয় কোনো জাহাজ এলে নাবিক-শ্রমিকরা জাহাজ থেকে নেমে ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের জাহাজ ভারতের বন্দরে গেলে শ্রমিকদের জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হয় না। শ্রমিকরা জাহাজের মধ্যে কারাবন্দির মতো করে দিন কাটায়। এজন্য আমরা ল্যান্ডিং পাস দাবি করছি যাতে শ্রমিকরা জাহাজ থেকে ওঠানামা করতে পারেন।’
মজুরি ও মৃত্যুকালীন ভাতা পুনর্নির্ধারণ এবং ল্যান্ডিং পাস নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে কোনো সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত শ্রমিকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন বলে জানান মোহাম্মদ ঈছা মিয়া।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন।
এর আগে, গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান ও পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেছিল লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন। বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর রাত ৮টায় তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
সারাবাংলা/আরডি/এমও