Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন প্রণয়নের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ নভেম্বর ২০২২ ১৬:২৪

ঢাকা: কর্মস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং আইএলও কনভেনশন-১৯০ ‘ইলেমিনেশন অব ভায়োলেন্স এন্ড হেরাসমেন্ট ইন দি ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক’ অনুসমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের জোট জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ।

রোববার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এর সদস্য সংগঠন আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলেসের পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন।

নাজমা ইয়াসমীন বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে নারীরাও। সরকারি-বেসরকারি চাকরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় এখন নারীরা কর্মরত। পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যায়ও তারা পড়ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা এখনও বৈষম্যের শিকার। উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো যৌন হয়রানি। শারীরিক, মানসিক, মৌখিক, বিভিন্নভাবে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নারীর নিরাপত্তার বৈষম্য খুবই প্রকট। দিনে দিনে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির মাত্রা বেড়েই চলেছে এবং বর্তমানে তা এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই মোট ৩৭১ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬২ জন কন্যাসহ ৯১ জন। তার মধ্যে ১২ জন কন্যা ও ১০ জন নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ২ জন কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও ৫ জন কন্যাসহ ১০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। নারী ও কন্যা পাচারের ঘটনা ঘটেছে ৬৩টি। এর মধ্যে ১৮ জন কন্যা।’

বিজ্ঞাপন

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে নাজমা ইসলাম বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই দশ মাসে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৩০ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৯ নারী, আর এ কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। এ ছাড়া আরও ১৪১ নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।’

বিশ্লেষণ অনুযায়ী ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি। এরপর নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নোয়াখালী জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি।

নাজমা ইসলাম আরও বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা নারীর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম বাধা। এটা কোনো একক সমস্যা নয়। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে হবে।’

নারীর প্রতি এ সহিংসতা রোধে নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরাতন আইনগুলোকে সংস্কার এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘নারীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নারী নির্যাতনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।’

সংবাদ সম্মেলনে হয়রানি ও নির্যাতন রোধে সাত দফা দাবি তুলে ধরে জেন্ডার প্লাটফর্ম। দাবিগুলো হলো-

ক. যৌন হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন’ প্রণয়ন করতে হবে।

খ. কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসন বিষয়ক আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থন করতে হবে।

গ. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে দেয়া হাইকোর্টের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। কর্মস্থলে যাতায়াতের পথে এবং সমাজে নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

ঘ. আদালতের নির্দেশনা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে।

ঙ. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার নিষ্পত্তি করা ও বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করতে হবে।

চ. বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর সংশোধনীতে মহিলাদের প্রতি আচরণ সংক্রান্ত নতুন বিধি ৩৬১ ক এবং সেই বিধি (২) এ বর্ণিত অভিযোগ কমিটি গঠন হাইকোর্টের প্রদানকৃত গাইডলাইনের ভিত্তিতে করতে হবে।

ছ. নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সীমা জহুর, মনডিয়াল এফএনভির বাংলাদেশ পরামর্শক মো. শাহীনুর রহমান, কর্মজীবী নারীর নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সানজিদা সুলতানা, ফেয়ারওয়্যার ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার বাবলুর রহমান, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/ইএইচটি/ইআ

আইন প্রণয়ন যৌন হয়রানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর