Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না ব্যাংক, শুনানি ১ ডিসেম্বর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ নভেম্বর ২০২২ ১৮:২১

ঢাকা: ঋণের বিপরীতে গ্রহণ করা চেক দিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। আদালত এ বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন।

ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার (২৮ নভেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে অর্থঋণ আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা করতে পারবে। এ ছাড়া দেশের সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের বিপরীতে গ্রহণ করা চেক দিয়ে যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর এ বিষয়ে করা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।

রায়ে ঋণ আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীর মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে করা ব্র্যাংক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলা বাতিল করেন আদালত।

আদালতে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল বাকী। তার সঙ্গে ছিলেন ওয়াহিদা আফরোজ চৌধুরী, আইনজীবী কায়েদে আজম ইকবাল, আইনজীবী শাহীনুর রহমান ও আইনজীবী আছাদুজ্জামান। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাইফুজ্জামান।

রায়ের পর আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী বলেন, এ রায়ের ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের বিপরীতে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না। তবে অর্থঋণ আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা করতে পারবেন। দেশে প্রায় ১০ লাখের মতো চেকের মামলা আছে। সবগুলো মামলা স্থগিত হয়ে গেল।

বিজ্ঞাপন

রায়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে দেশের সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের বিপরীতে গ্রহণ করা চেক দিয়ে যেসব মামলা করা হয়েছে সেসব মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।

রায়ে আপিলকারীর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। এবং ঋণ হিসেবে নেওয়া মোট টাকার ৫০ শতাংশ আগামী ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স করতে আইন প্রণয়নে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি দেশের সব আদালতকে ঋণের বিপরীতে চেকের মামলা আমলে না নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রায়ে আদালত বলেছেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।

আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের হিডেন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।

আদালত বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।

রায়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একইসঙ্গে তাদেরকে ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।

আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনো গরীবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনোদিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেনতেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। লোন আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। অন্যকোনো আইনে নয়।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক ব্যাংক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর শাখা থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধ না করতে পারায় ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলায় তাকে ৬ মাসের সাজা ও ২ লাখ ৯৫ হাজার ৩০৫ টাকা জরিমানা করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন মোহাম্মদ আলী।

শুনানি শেষে আদালত মোহাম্মদ আলীর আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর