Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেয়র রেজাউলকে ‘হুমকি দিয়ে’ কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৫১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে ‘হুমকি’ দিয়ে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া এক মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আবছার চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে বর্ধিত হারে চসিকের গৃহকর আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নুরুল আবছারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

নুরুল আবছার চৌধুরী (৬০) নগরীর সদরঘাট থানার কদমতলী এলাকার বাসিন্দা। তিনি সদরঘাট থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

গত ২০ সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা দায়ের করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়িতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নুরুল আবছার চৌধুরী মেয়রকে তুই-তোকারি করে অশোভন ভাষায় কথা বলেন। মেয়রকে চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাবার জন্যও হুমকি দেন।

নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকায় বসে একটি অনলাইন টেলিভিশনে মেয়রের বিরুদ্ধে মানহানিকর, উসকানিমূলক বক্তব্য শুনে বাদী মামলাটি দায়ের করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আবছারকে হাইকোর্ট ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন। তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। উনার আইনজীবীরা শুনানিতে বলেছেন- মেয়রের বিরুদ্ধে উনি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো স্লিপ অব ট্যাং এবং ৭০ লাখ নগরবাসীর স্বার্থে।’

বিজ্ঞাপন

‘রাষ্ট্রপক্ষে আমি জামিনের বিরোধিতা করে বলেছি- স্লিপ অব ট্যাং দাবির মধ্য দিয়ে অভিযোগের সত্যতা আসামিপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন। এরপর আসামির আইনগত সুরক্ষা পাবার আর কোনো অধিকার নেই। ৭০ লাখ নগরবাসীর স্বার্থে উনার আন্দোলনের অধিকার আছে। কিন্তু সেই নগরবাসীর প্রতিনিধি মেয়রকে যখন তিনি গুণ্ডা বলবেন সেটি তখন ব্যক্তি আক্রমণ হয়ে গেছে। এরপর যখন মেয়রকে চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে হবে বলেন তখন সেটি হুমকি হয়ে যায়। আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’

উল্লেখ্য, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে কর আদায় স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে।’

কিন্তু চলতি বছরের প্রথম ভাগে পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর ফলে পাঁচ বছর পর একই দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। ‘গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স আইন বাতিল করো/দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করো তার ওপর কর ধরো।’- এই স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি গত একমাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর