পার্বত্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি
২৮ নভেম্বর ২০২২ ২১:১৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর উপলক্ষে এই কর্মসূচি পালন করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সোমবার( ২৮ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহীদ মিনার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধানে জুম্ম জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। একইভাবে চুক্তির ২৫ বছর পরেও জুম্ম জনগণের শাসনতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট কুকি-চিন সন্ত্রাসীসহ নানা চুক্তিবিরোধী গোষ্ঠীর মাধ্যমে এই চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে। এ ছাড়াও উন্নয়নের নামে ভূমি-উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যার ফলে বিশাল সংখ্যক জুম্ম জনগোষ্ঠীরা নিজ বাস্তুভিটা ছেড়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে। জুম্ম জনগণের লড়াই সংগ্রামকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য সেখানে প্রতিনিয়ত শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র চলছে।’
তিনি ছাত্রসমাজকে এই আন্দোলন সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের যথাযথ কোন পদক্ষেপ আমরা আজও দেখতে পাই না। পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের নিরাপত্তা নেই, ভূমির অধিকার নেই। সরকার তার মদদপুষ্ট সংগঠন সৃষ্টি করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল আহ্বায়ক রাজেশ্বর দাশগুপ্ত বলেন, ‘এদেশে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। তার উদাহরণ আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখতে পাই। যেখানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের মৌলিক অধিকারকে প্রতিনিয়ত ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। মাতৃভাষায় শিক্ষাদান দেখা যায় না। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে এত দীর্ঘসময় লাগার কথা নয়। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পর্যটনের নামে ভূমি উচ্ছেদ, চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে সে কথা আমরা জানি। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন করতে হবে সরকারের এইসব কর্মকাণ্ড চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে যায় কিনা।’
চবি সংসদ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি প্রত্যয় নাফাক বলেন, ‘বাংলাদেশে নিপীড়িত পাহাড়িদের আরো নিপীড়ন করা হচ্ছে। তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাদের ভাষা সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয় রক্ষার জন্য সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ দেখা যায় না। বাংলাদেশে প্রত্যেকটি জায়গায় নামে বেনামে তাদের ভূমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সিলেটে খাসিয়াপুঞ্জিতে জমি দখল করা হচ্ছে। আপনারা খবর নিয়ে দেখা যাবে, মধুপুরে গারোদের ভূমি বনবিভাগ কেড়ে নিচ্ছে। আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি যখন আমাদের কথা বলার জন্য মুখের ভাষা লুটে নেওয়া হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সংকটকে সরকারের জাতির অস্তিত্ব রক্ষার দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করতে হবে। এ জন্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক নরেশ চাকমা।
এ ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, সাংগঠনিক সম্পাদক হ্লামিও মারমা, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরামের চবি অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক সুখীজয় তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি চবি শাখার সদস্য সুখীকুমার তঞ্চঙ্গ্যা।
সারাবাংলা/সিসি/একে