‘প্রতি ১০ জনে ১ নারী সাইবার অপরাধের শিকার’
২৮ নভেম্বর ২০২২ ২২:১০
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেছেন, সাইবার জগতে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি ১০ জনে একজন নারী সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। তবে সাইবার হামলার বিষয়ে এখনো অনেক নারীই জানে না। তাই সাইবার অপরাধ ঠেকাতে আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিতে হবে।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আয়োজনে জাতীয় কনভেনশনে এসব কথা বলেন তিনি।
নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ ও সামাজিক শক্তিকে সংহত করার লক্ষ্যে ‘নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি, নতুন সমাজ নির্মাণ করি’- প্রতিপাদ্যে এই জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
লাভা বিশ্বাস নন্দিনী এবং পরিধি মজুমদার নাচ পরিবেশনের মাধ্যমে কনভেনশনের সূচনা হয়। কনভেনশনে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক। ঘোষণা পাঠ করেন নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
কনভেনশনে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সদস্য প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন।
সভাপতির বক্তব্যে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘নারীদেরকে বৈষম্যমুক্ত করতে পরিবার ও পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে কীভাবে মূল্যবোধ তৈরি করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের শেকড় পরিবার, সমাজ ও সংসারকে শক্তিশালী করতে এর বিকল্প নেই।’
মডারেটরের বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারী প্রতি সহিংসতা নির্মূলে নানা পদক্ষেপ থাকলেও সহিংসতার কারণ, উৎস বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটে আলাদা। এর মূলে আছে সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে থাকা অসম ক্ষমতা। আমাদের দেশে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আজকের আয়োজিত কনভেশনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’
বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় সমাজ মানস ও নারীর মানবাধিকার বিষয়ে জাতীয় কমিটির সদস্য প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘দেশের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে নারীরা থাকলেও তার বিপরীতে নারীর প্রতি সহিংসতার ক্রমবর্ধমান চিত্র সমাজের নারীবিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করছে। সাম্প্রতিক ধর্মীয় আলোচনায় বিজ্ঞানভিত্তিক যা আলোচনা হয় তার চেয়ে বেশি থাকে নারী বিদ্বেষী বক্তব্য। সমাজে একটা সহনশীল অবস্থা চলছে যেখানে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে, নারী-পুরুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিতে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে সমাজ মানস পরিবর্তনে কাজ করতে হবে।’
নারী ও কন্যার মানবাধিকার ও অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি) বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নারীর প্রতি হয়রানি কখন নির্যাতনে পরিণত হয় তা এখন তরুণদের আলোচনায় আসছে। বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের কারণে নারী ও কন্যার প্রতি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। করোনায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে, ১০ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। আবার বাল্যবিয়ের ফলে সৃষ্ট বিচ্ছেদের কারণে শিশুশ্রমও বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, অর্থনৈতিক বিপর্যয় বাড়লে নারীর প্রতি অভিঘাত বাড়বে। নতুন উন্নতির অংশীদারিত্বে নারীর অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি না পেলে বৈষম্য বাড়বে। বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন কর্মসূচির উন্নয়নে নারীর সাংস্কৃতিক, আইনী, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে নজর দিতে হবে।’
জাতীয় কনভেনশনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. এস এম এ সবুর, অ্যাড. আব্দুন নূর দুলাল, বিশিষ্ট সাংবাদিক বাসুদেব ধর, আইনজীবী অ্যাড. মো. আমিনুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাবেক সাংসদ ছবি বিশ্বাস, মনি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মুকুল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মাহবুব জামান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহিদা চৌধুরী, ডা. মেখলা সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক তানিয়া হক, বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার প্রমুখ।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম