পা দিয়ে লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেল মানিক
২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৩:০৬
কুড়িগ্রাম: জন্ম থেকেই দুই হাত ছিল না মানিক রহমানের। বাম পা প্রায় ৬ ইঞ্চি খাটো। চিন্তায় দিশেহারা হয়েছিলেন মানিকের বাবা-মা। অনেক পরিশ্রম করে স্কুলমুখী করেছেন ছেলেকে। শ্রেণিকক্ষে নিজেদের চকিতে আলাদা বসিয়ে পায়ের আঙ্গুলে কলম বসিয়ে খাতায় লিখত সে। পর্যাক্রমে সুস্থ ও স্বাভাবিক অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতোই লড়াই করে শিশু শ্রেণি থেকেই তার রোল ছিল এক বা দুই।
এ বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একইভাবে পায়ের আঙ্গুলে কলম বসিয়ে খাতায় লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে মানিক।
অদম্য মেধাবী মানিক রহমানের ফলাফল দেখে অবাগ হয়েছেন শিক্ষক ও এলাকাবাসী। জেলার ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল মানিক। জেএসসি’তে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে সে। এ বছর ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেছিল।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও রাবাইতারী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মরিয়ম বেগমের ছেলে। পিতা-মাতার বড় ছেলে মানিক রহমানের জন্ম থেকেই দুটো হাত নাই, একটি পা অন্যটির চেয়ে অনেকাংশে খাটো।
সে সমাজের বোঝা হবে, কাজকর্ম করে খেতে পারবে না- এসব ভেবে নিয়ে দিশেহারা হয়ে ছিলেন মা-বাবা। তবে বাবা-মায়ের চেষ্টায় পিছিয়ে যায়নি মানিক। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল সে। মানিক শুধু পা দিয়ে লিখাই না, পা দিয়ে মোবাইল চালানো, কম্পিউটার টাইপিং এবং ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী। সে ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে মানিকের মা মরিয়ম বেগম বলেন, মানিকের জন্মগত দুই হাত নেই। দুই পায়ের মধ্যে বাম পা প্রায় ৬ ইঞ্চি খাটো ছিল। তাকে নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা ছিলাম। তবে ছোট বেলা থেকে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থাকায় প্রথম শ্রেণি থেকে রোল এক হয় মানিকের।
বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ছোট বেলায় হামাগুড়ি দিয়ে কলম ধরতে ও টেলিভিশনের রিমোট ধরে কার্টুন দেখে মজা পেত মানিক। স্কুলের সময়ের আগে গোসল করত। আর ক্লাসের আগে পৌঁচ্ছাতে হতো তাকে। প্রতিদিন একই ঘরে রাত ১১টা পর্যন্ত লেখাপড়া করত।
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও মানিক রহমান অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভাল ফলাফল করায় আমরা মুগ্ধ। সে ভাল ফলাফল করায় আমরা খুশি হয়েছি।’
সারাবাংলা/ইআ