দলীয় সংকট দূর করতে রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের বৈঠক
২৯ নভেম্বর ২০২২ ১২:৪৮
ঢাকা: ভুল বোঝাবুঝি দূর করে জাতীয় পার্টির (জাপা) মধ্যে বিরাজমান সংকট নিরসনের প্রস্তাব নিয়ে বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। দলটির দায়িদ্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধনীর ওয়েস্টিন হোটেলে দুই নেতার মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দলটির নেতা সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাদ এরশাদ ও ঢাকা মহানগর জাপা উত্তরের নেতা সেন্টু উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে রওশন এরশাদকে উদ্দেশে করে জিএম কাদের বলেন, ‘আমরা মিলে মিসে কাজ করি। আপনার নামে বিভিন্ন জেলা কমিটি হচ্ছে। এতে করে জনগণের মাঝে ভুল মেসেজ যাচ্ছে। এর চেয়ে আমরা সমন্বয় করে দলটিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
তবে জিএম কাদেরের প্রস্তাবে কোনো সাড়া দেননি রওশন এরশাদ। তবে তিনি জিএম কাদেরের পারিবারিক খোঁজ খবর নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এ বিষয় রওশন এরশাদের মূখপাত্র কাজী মামুন জানান, রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন।
এর আগে, গত রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষেদেশে ফিরেছেন রওশন এরশাদ।
গত বছরের ১৪ আগস্ট রওশন এরশাদের ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেয়। পরে তার অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করলে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন বেশ কিছুদিন তাকে আইসিইউ’তে রাখা হয়। পরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কেবিনে নেওয়া হয়। হাসপাতালে থাকাকালেই গত বছর ২০ অক্টোবর আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্বিতীয় দফায় আইসিইউ’তে নেওয়া হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করছেন জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদে থাকা রওশন এরশাদ। কিন্তু ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রওশন হঠাৎ ৩০ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর পরদিনই জাপার সংসদীয় দলের সদস্যরা বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশনকে সরিয়ে এই পদে জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।
দলের ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদ ছাড়া বাকি ২৪ জনই এই সিদ্ধান্তে একমত হন। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারকে জানায় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হকের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধিদল। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান এ বিষয়ে লিখিত আবেদন স্পিকারের কার্যালয়ে জমা দেন।
পরে অবশ্য মসিউর রহমার রাঙ্গা তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়ে জাপার সংসদীয় দলের নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসিউরকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জাপা। এমনকি দলের দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।
গত ৩০ অক্টোবর স্পিকারের কাছে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, জি এম কাদেরকে বিরোধীদলের নেতা হিসেবে ঘোষণা না দিলে জাপা সংসদ অধিবেশনে যোগদান করবে না। এরপরই বেগমর রওশন এরশাদ তার ডাকা ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল স্থগিত করেন। পরের দিন জাতীয় পার্টি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়।
এরপর দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার দায়ের করা একটি মামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ (১ম আদালত) মাসুদুল হক এই আদেশ দেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার একটি কপি মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জমা দিয়েছেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। ফলে বিরোধীদলীয় নেতার পদের বিষয়টি স্পিকারের সিদ্ধান্তে ঝুলে আছে।
সারাবাংরা/এএইচএইচ/এনএস