আয়াত খুন: আবিরের বাবা-মা ও বোন রিমান্ডে
২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৪:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে শিশু আয়াতকে খুনের পর লাশ ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার আবিরের বাবা-মা ও ছোট বোনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালত তিনজনকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তবে বোন অপ্রাপ্তবয়সী হওয়ায় তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকালে গ্রেফতারের পরপরই তিনজনকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয় বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) মনোজ কুমার দে।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- আবীরের বাবা আজাহারুল ইসলাম, মা মোছাম্মৎ আলো বেগম এবং তার ১৫ বছর বয়সী ছোট বোন।
পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে সারাবাংলাকে জানান, শুনানি শেষে আবিরের বাবা ও মাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলিউল্লাহ। অন্যদিকে আবিরের বোনকে তিনদিন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখে সমাজসেবা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক সিরাজউল্লাহ কুতুবী।
‘রিমান্ডে আবিরকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পেয়েছি। এরপর আমাদের সন্দেহ, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আবিরের বাবা-মা, বোনের কাছেও এ বিষয়ে আরও তথ্য থাকতে পারে। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু খোলাখুলিভাবে বলতে পারছি না। যেসব তথ্য আবিরের কাছ থেকে পাওয়া গেছে সেগুলো তার বাবা, মা ও বোনের সঙ্গে ক্রসচেক করা হবে।’-
গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার মেয়ে চার বছর ১১ মাস বয়সী আলীনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হন। ১০ দিন পর ২৪ নভেম্বর পিবিআই আবির আলীকে গ্রেফতারে পর জানায়, আয়াতকে শ্বাসরোধে খুন করে লাশ কেটে ছয় টুকরো করে আবির। এরপর সেগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেয়।
আবিরকে নিয়ে গত শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে এবং রোববার পিবিআই টিম তার বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্য আরও যাচাই এবং আনুষাঙ্গিক প্রমাণ সংগ্রহে পিবিআই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে। প্রথম দফায় গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) আবিরকে দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। সোমবার দ্বিতীয় দফায় আরও সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পিবিআইয়ের ভাষ্যমতে, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আজহারুলের ছেলে আবির আলী। পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আবিরকে আয়াত ‘চাচ্চু’ বলে সম্বোধন করতো। ১৫ নভেম্বর বিকেলে বাসার সামনে থেকে আয়াতকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে আবির ঢুকে যায় তার বাবার বাসায়, যেখানে তখন কেউ ছিল না। সেখানে ১৫ মিনিটের মধ্যে শ্বাসরোধ করে আয়াতকে খুন করে আবির।
এরপর লাশ ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় নগরীর আকমল আলী সড়কের পকেটগেট বাজার এলাকায় তার মা আলো বেগমের বাসায়। মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদের পর আবির মায়ের বাসায় থাকত। তবে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যে এলাকায়, সেই বাবার বাসায়ও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আবির মায়ের বাসায় নিয়ে লাশ বাথরুমের তাকের ওপর লুকিয়ে রাখে। রাতে সেই লাশ বাথরুমে নিয়ে কেটে ছয় টুকরা করে ছয়টি ব্যাগে ভরে রাখে।
পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির।
কিন্তু মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সংগ্রহ করা সীম ব্লক থাকায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি আবির। আয়াতের খেলার সাথীদের কাছ থেকে তাকে কোলে নেওয়ার তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আবিরের গতিবিধি দেখে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ