‘নেপিডো সীমান্ত সম্মেলনে রোহিঙ্গা-মাদক ইস্যু গুরুত্ব পেয়েছে’
২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৭:২১
ঢাকা: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতীয় উদ্বেগের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও অনুরোধ করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর ২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিজিবি মহাপরিচালক।
রাজধানীর ঝিগাতলায় বিজিবি সদর দফতরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে বিজিবির বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সম্মেলনের বিষয়টি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
চলতি মাসের গত ২৪ নভেম্বর সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে মহাপরিচালক পর্যালোচনা ৮ম সীমান্ত সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। যা ২৭ নভেম্বর শেষ হয়। এতে বিজিবির ডিজির নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য সংস্থার দশ সদস্য অংশ নেন। আর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ১৫ সদস্য অংশ নেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাদকের প্রবাহ রোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলায় উভয় বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বিজিপি’র অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের কারণে সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনাকর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিজিপি’র প্রতি আহ্বান জানান বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ।
সম্মেলনের বাইরে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইউনিয়ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাদাভাবে সাক্ষাত করেন। এসময় তিনি বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি দুই বাহিনীর পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন।
এই সম্মেলনে তিনি বিজিবি ও বিজিপি’র মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখে এবং একে অপরের মধ্যে যাতে কোন মতানৈক্য সৃষ্টি না হয়। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে সীমান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিনি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত চুক্তি-১৯৮০’-এর প্রতি মিয়ানমারের অটল অবস্থানের কথা ব্যক্ত করে অবৈধ মাদক পাচার ও সীমান্ত পারাপার রোধসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুনরায় উভয় বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত টহল শুরু করার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়।
এবারের সম্মেলনে দুই দেশের সীমানা রক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে ১২টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সেগুলো হলো- সীমান্ত এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করতে সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষই প্রতি দুই মাসে একবার ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের সমন্বয় সভা/পতাকা বৈঠক, বছরে দুইবার রিজিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে এবং বছরে দুইবার বিজিবি এবং বিজিপি (এমপিএফ)-এর মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনের আয়োজন করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় বিওপি বা কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক করার কথাও বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি গুরুত্বারোপ করে।
অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সীমান্ত পারাপার রোধে কার্যকরভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।
সীমান্তের দুইপাশে আন্তঃসীমান্ত অপরাধীচক্র ও সন্ত্রাসগোষ্ঠীর অবস্থান পরিলক্ষিত হলে তাদের অপতৎপরতা রোধকল্পে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদানসহ একে অপরকে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার রোধে মিয়ানমার সে দেশের জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসরণ করে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে।
পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার মাধ্যমে চলমান সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রতিষ্ঠায় উভয় পক্ষ যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষ ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক ও এডহক বৈঠকের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইন অনুসরণ করে দুই দেশের কারাগারে আটক নাগরিকদের কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর ও গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়েছে।
উভয় পক্ষই সীমান্ত সম্পর্কিত প্রচলিত আইন ও অনুশাসন মেনে চলতে সম্মত হয়েছে। সীমান্ত কাঁটাতারে বৈদ্যুতিক লাইন এবং ল্যান্ড মাইন স্থাপনের বিষয়ে বিজিবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলে বিজিপি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করবে বলে আশ্বস্ত করে।
দুই দেশের খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড বিনিময় এবং বিজিবি ও বিজিপি’র মধ্যে শুভেচ্ছা সফরসহ বিভিন্ন আস্থা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়েছে।
দেশের প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দ্রুত সাড়া প্রদানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
বিজিবি ও বিজিপি’র মধ্যে পরবর্তী ৯ম সীমান্ত সম্মেলন আগামী ২০২৩ সালের মে/জুন মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে উভয়পক্ষ পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এনইউ