Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনসভার প্রচারণা নিয়ে বিভক্ত ‘মহাব্যস্ত’ ও ‘কম ব্যস্ত’ নেতারা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ নভেম্বর ২০২২ ২১:৩১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে পাশ কাটিয়ে জনসভার প্রচারণা শুরু করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একদল নেতা। এদের অধিকাংশই নগর কমিটির সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এমনকি তাদের সঙ্গে প্রচারণায় রয়েছেন মহিউদ্দিনের সহধর্মিণীও।

জনসভার প্রচারণা নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ্য হলেও উভয় অংশের নেতারা সেটা অস্বীকার করেছেন। ‘সমান্তরাল’ প্রচারণায় নেতৃত্ব দেওয়া এক নেতা বলেছেন, ‘সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মহাব্যস্ত। আমরা যারা কম ব্যস্ত, আমাদের মতো প্রচারণা শুরু করেছি।’

বিজ্ঞাপন

আগামী ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভা হবে। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম নগরীতে ২০১২ সালের পর এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা।

জনসভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন গত ৯ নভেম্বর নগরীতে তিন সাংগঠনিক জেলার যৌথ প্রতিনিধি সভা করেন। দুই নেতা জনসভাকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করে চট্টগ্রামে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে, থানায়-থানায়, ইউনিয়নে-ইউনিয়নে প্রচারণা ও কর্মীসভার মাধ্যমে গণজাগরণ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এরপর ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এক যুক্ত বিবৃতিতে নগরীর সব সাংগঠনিক থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের পূর্বঘোষিত সম্মেলন স্থগিত রেখে জনসভার প্রচারণায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। ১৯ নভেম্বর জনসভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নগরীর ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কার্যকরী কমিটির সভায় যোগ দেন নাছির।

বিজ্ঞাপন

২০ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে নগরীর সকল থানা-ওয়ার্ডে কর্মীসভার মাধ্যমে প্রস্তুতি ও প্রচারণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সভায়, যাতে মাহতাব-নাছিরের পাশাপাশি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও ছিলেন।

২১ নভেম্বর আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরীর দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে ‘সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের’ ব্যানারে আরেকটি প্রস্তুতি সভা করেন। ওই সভায় এখন যারা ‘সমান্তরাল প্রচারণায়’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন, নগর আওয়ামী লীগের সেসব নেতাদের দেখা যায়নি। ২৩ নভেম্বর নাছির ৪৩ নম্বর আমিন জুট মিল সাংগঠনিক ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করেন।

এসব প্রস্তুতি সভায় আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে বর্তমানে ‘সমান্তরাল’ প্রচারণায় থাকা নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি। নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, হাসান মাহমুদ শমসের এবং মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত শফিকুল ইসলাম ফারুকসহ কয়েকজন নেতা এসব সভায় ছিলেন।

এ অবস্থায় গত ২৫ নভেম্বর নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ঢোলবাদ্য, গান-নাচসহ ভিন্নধর্মী আয়োজনের মধ্য দিয়ে জোরালোভাবে আলাদা প্রচারণায় নামেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। পরদিন তিনি জনসভাস্থল পলোগ্রাউন্ড ময়দানে ‘ঘুড়ি উৎসব’ আয়োজন করে প্রচারণা চালান।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) নগরীর চশমাহিলে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে যান নগর আওয়ামী লীগের একদল নেতা। এদের মধ্যে ছিলেন- নগর কমিটির সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, শ্রম সম্পাদক আবদুল আহাদ, নগর শ্রমিক লীগের সভাপতি বখতিয়ার উদ্দিন খান, কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদ।

সেখানে মহিউদ্দিনের স্ত্রী নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীলু নাগসহ সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের নেতারা মতবিনিময় করেন। এর মধ্য দিয়ে মাহতাব-নাছিরকে ‘পাশ কাটিয়ে’ চলার দৃশ্যমান সূচনা হয়।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) ‘পাশ কাটিয়ে’ চলা নেতারা পাশে পান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নগর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে। এদিন সকালে আ জ ম নাছির উদ্দীন তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী ও কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনসহ কয়েকজনকে নিয়ে পলোগ্রাউন্ড পরিদর্শনে যান। অন্যদিকে ‘পাশ কাটিয়ে’ চলা নেতারা একই সময়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে জনসভার প্রচারণা শুরু করেন, উদ্বোধন করেন মেয়র রেজাউল।

উদ্বোধনের পর ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা নগরীর জামালখান, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালি, নিউমার্কেট, বাটালি রোড, কাজির দেউরি এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। বিকেলে ট্রাক নিয়ে নগরীর শাহআমানত সেতু, বহদ্দারহাট ও কালুরঘাট এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণ করেন তারা।

এই কর্মসূচিতেও নগর কমিটির নেতাদের মধ্যে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বদিউল আলম, আবদুছ ছালাম, শফিক আদনান, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আবদুল আহাদ ছিলেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন- নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, নগর শ্রমিক লীগের সভাপতি বখতিয়ার উদ্দিন খান, কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদ ও নীলু নাগ, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা ও ফরিদ মাহমুদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক কেবিএম শাহজাহান, সাদেক হোসেন পাপ্পু, শ্রমিক লীগ নেতা আবুল হোসেন আবু, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে আলাদা প্রচারণা চালানোর বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের দু’জন সহ সভাপতির সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলা’র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সহ-সভাপতি বলেন, ‘উনারা আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করছেন না। কোনো কর্মসূচির বিষয়ে আমাদের অবহিত করছেন না। সাধারণ সম্পাদক সাহেব উনার লোকজন নিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন, আমাদের ডাকছেন না। প্রচারণার জন্য কোনো টিমও গঠন করা হয়নি। এখন আমরা কী করতে পারি? হয় ঘরে বসে থাকতে হবে, না হলে নিজেরাই নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালাতে হবে। ১০ বছর পর আমাদের নেত্রী চট্টগ্রাম শহরে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসছেন। আমরা তো ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই নিজেরাই নেমে গেছি।’

সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনসভার প্রচারণার কাজে সবাই ব্যস্ত। উনারা (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) মহাব্যস্ত। সেজন্য আমরা যারা কম ব্যস্ত তারা নিজেদের মতো করে একটা উদ্যোগ নিয়েছি। তবে এটা কোনোভাবেই পাল্টাপাল্টি নয়। কয়েকদিন আগে আমরা এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করেছি। সেখানে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। আমাদের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নেত্রীর জনসভাকে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমুদ্রে পরিণত করব।’

জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সকল নেতাকর্মী যার যার অবস্থান থেকে এলাকায়-এলাকায় প্রচারণা চালাতে হবে। নিজেদের মতো করে প্রচারণার ক্ষেত্রে কাউকে নিষেধ করা হয়নি।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কম ব্যস্ত চট্টগ্রাম নেতা বিভক্ত মহাব্যস্ত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর