১৩ বছরে ৫৮ মিলিয়ন টাকা বেতন-ভাতা নিয়েছেন ওয়াসার এমডি
২৯ নভেম্বর ২০২২ ২৩:২১
ঢাকা: ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান তার নিয়োগের পর থেকে গত ১৩ বছরে মোট ৫৭ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন টাকা-ভাতা বাবদ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ঢাকা ওয়াসা।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন আইনজীবী এএম মাসুম। পরে আদালত প্রতিবেদনটি নথিভুক্ত করতে আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন।
আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি তার মূল বেতন হিসাবে ২১ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন টাকা নিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি তার বাড়ি ভাড়া হিসাবে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন টাকা, নতুন বছরের ভাতা হিসাবে ০ দশমিক ৩ মিলিয়ন টাকা, চিকিৎসা ভাতা হিসাবে ৩ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন টাকা এবং বিশেষ অর্থ হিসেবে ১৭ দশমিক ৭১ মিলিয়ন টাকা পেয়েছেন। এছাড়াও বিনোদন ভাতা বাবদ ৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন টাকা, উৎসব ভাতা বাবদ ৩ দশমিক ১১ মিলিয়ন টাকা, পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড হিসাবে ৩ দশমিক ০৯ মিলিয়ন টাকা, অন্যান্য ভাতা হিসাবে শূন্য দশমিক ১৩ মিলিয়ন এবং মহার্ঘ ভাতা হিসাবে শূন্য দশমিক ১৭ মিলিয়ন টাকা নেন।
এর আগে, গত ১৭ আগস্ট ১৩ বছরে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান এ পর্যন্ত বেতন, উৎসব ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবিধা হিসেবে কত টাকা নিয়েছেন তার হিসাব তলব করেন হাইকোর্ট।
তারও আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার ও সার্ভিস (বেতন ও সুবিধাদি) আদেশ লঙ্ঘন করে ওয়াসার এমডিকে অযৌক্তিক ও উচ্চ বেতন দেওয়ার অভিযোগ এনে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন রিট করেছিলেন।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ১৭ আগস্ট বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
রুলে ঢাকা ওয়াসার এমডিকে অপসারণে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাকে অপসারণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পাশাপাশি গত ১৩ বছরে ওয়াসার এমডিকে কী পরিমাণ বেতন-বোনাস, টিএডিএসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সে বিষয়ে তথ্য প্রতিবেদন আকারে ৬০ দিনের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যানকে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, তাকসিম এ খানকে ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি করা হয়। এরপর থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়াসার সেবার গুণাগুণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকার তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর তিনি ষষ্ঠ মেয়াদে ফের নিয়োগ পান। প্রতিবারই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম