রিকশা চালিয়ে দুই ভাই পেল জিপিএ-৫
৩০ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৪৯
গাজীপুর: রিকশা চালিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করলেন দুই সহোদর। তারা হলেন শেরপুর জেলার চৌধুরীপাড়া গ্রামের মো. মোশাররফ হোসেনের ছেলে মিনহাজুল আবেদীন নয়া ও তৌহিদুর রহমান নিশাত। তারা উভয়ই গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, মিনহাজুল ও তৌহিদুরের বাবা মো. মোশাররফ হোসেন আগে গার্মেন্টস ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হলে টঙ্গীতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় পাওনাদারের চাপে মোশাররফ হোসেনের দুই ছেলেও রিকশা চালানো শুরু করে। সকালে স্কুলে ক্লাশ করে সন্ধ্যায় রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন হতো তার সবটুকুই পরদিন সকালে বাবার হাতে তুলে দিতেন তারা।
মিনহাজুল ও তৌহিদুল বলেন, ‘শুধুমাত্র স্কুলের অধ্যক্ষ ওয়াদুদুর রহমান স্যারের জন্য আমাদের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই স্যার আমাদের মাসিক বেতন ও অন্যান্য সকল ফি মওকুফের ব্যবস্থা করে দেন। পাশাপাশি সব সময় আমাদের খবর নিতেন। পড়ালেখার মান উন্নয়নের জন্য দিক নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা দিতেন। স্যারের সহযোগিতায় তাদের পক্ষে এই ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।’
তারা আরও বলেন, ‘বাবার ব্যবসায় লোকসান হবার পর থেকে বাবার একার পক্ষে সংসার চালিয়ে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই আমার দুই ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। দিনে ক্লাশ করে সন্ধ্যায় দুই ভাই মিলে টঙ্গীর বিভিন্ন জায়গায় রিকশা চালাতাম। রিকশা চালিয়ে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ ও নিজেদের পড়ালেখার খরচ চালাতাম।’
দুই ভাই আরও জানায়, ‘যখন আমরা স্বচ্ছল ছিলাম, তখন আমাদের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব। আমাদের এসএসসি’র রেজাল্টের পর এ ইচ্ছা আরও বেড়ে গেল। কিছুদিন আগে আমাদের বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনি। তাই আমরা দুই ভাই ডাক্তার হয়ে সুবিধাবঞ্চিত লোকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করব- এটাই আমাদের স্বপ্ন।’
এ বিষয়ে সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওয়াদুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্কুলের দুই শিক্ষার্থী মিনহাজুল ও তৌহিদুর। তারা দুই ভাই একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় আংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এ বিষয়টি সত্যিই খুব আনন্দের।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকে আমি ওদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রেখেছি। যতটুকু সম্ভব তাদের সহযোগিতা করেছি। তাদের স্কুলের বেতন ও অন্যান্য ফি মওকুফ করেছি। তাদের এই অর্জন যেন আমার নিজেরও অর্জন। আমি আশাবাদী তারা দুই ভাই তাদের ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ করে দেশ ও জাতীর উপকার করবে।’
সারাবাংলা/এনএস