সিরাজগঞ্জে ৫ মামলায় বিএনপির ৭৬৭ নেতাকর্মী আসামি

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের কয়েকটি কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মোট পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিভিন্ন উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ মোট ৭৬৭ নেতাকর্মীকে।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) থেকে বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত এনায়েতপুর, বেলকুচি, কাজিপুর, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ থানায় এসব মামলা করা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মামলার আসামিদের মধ্যে এনায়েতপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম মাস্টার, সদস্য সচিব মঞ্জু শিকদার, বেলকুচির আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম গোলাম, সদস্য সচিব বনি আমিন, কাজিপুর উপজেলার সদস্য সচিব সেলিম রেজা, সাবেক মেয়র আব্দুস সালাম, রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনুল হক, সহ-সভাপতি খাইরুল মাস্টার, তাড়াশ উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রাজিব আহম্মেদ মাসুম, তালম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সোহরাব হোসেনসহ বিভিন্ন উপজেলা ও থানা বিএনপির শীর্ষ নেতারা রয়েছেন।

এনায়েতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিছুর রহমান জানান, বুধবার সকালে খুকনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ আফাজ উদ্দিন বেপারী বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ১১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

তিনি বলেন, মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার রাতে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কেজিরে মোড় যাওয়ার পথে ওঁৎ পেতে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান এবং হামলা ও ভাঙচুর করেন। এতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।

বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজমিলুর রহমান জানান, রোববার (২৭ নভেম্বর) রাতে ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের আদাচাকি গ্রামে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর ককটেল হামলা করেন বিএনপি-ছাত্রদলের নেতারা। এ অভিযোগে সোমবার (২৮ নভেম্বর) ভোরে বেলকুচি পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ উৎস বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ১০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

কাজিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত জানান, সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আবু সায়েম বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ জনকে।

রায়গঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জুয়েল আকন্দ বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৭০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

তাড়াশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাড়াশ-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের লাউতা চারমাথা এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় তালম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজ্জামেল হক মজনু বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ১২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে এ মামলার সূত্র ধরে থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- উপজেলার তালম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সোহরাব হোসেন, তালম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব দিদার হোসেন, তাড়াশ উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিব আহম্মেদ মাসুম, বারুহাস ইউনিয়নের পলাশী ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোক্তার হোসেন ও মাধাইনগর ইউনিয়নের সরাপপুর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান বাচ্চু বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের কিছু নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর সমাবেশ বানচাল করতে পরিকল্পিতভাবে এসব কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। যত মামলা ও গ্রেফতার চলুক, আমরা রাজশাহীর সমাবেশ সফল করব।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০১৩-১৪ সালের মতো বিভিন্ন উপজেলায় তাণ্ডব শুরু করেছে। তারা দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

সারাবাংলা/এনইউ