Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৮ কোটি টাকা বকেয়া, পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ নভেম্বর ২০২২ ২১:৪৮

দিনাজপুর: ১৮ কোটি টাকা বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে আছে প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভা। বিদ্যুৎ না থাকায় জন্ম নিবন্ধনসহ সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সেবা নিতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন জনগণ। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় করোনার ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন ভ্যাকসিন নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের আগে পৌর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি বলে দাবি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খানের। তবে সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পক্ষ থেকে পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) সরেজমিনে পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে আছে দিনাজপুর পৌরসভা। শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের রুমের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে একটি জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় জন্মসনদসহ সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে কর্মচারীদের কেউ রুমে অথবা কেউ বাইরে বসে অলস সময় পার করছেন।

এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ায় সকাল থেকে ওই এলাকার জনগণ পৌরসভায় এসে সেবা না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছেন। অপরদিকে, ১ ডিসেম্বর থেকে পৌরসভায় বিভিন্ন ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এই ভ্যাকসিনেশনের জন্য প্রায় চার হাজার করোনা ভ্যাকসিন ও কয়েক হাজার অন্যান্য ভ্যাকসিন পৌরসভায় ফ্রিজার করে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ভ্যাকসিনগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সেবা নিতে আসা মুন্সিপাড়ার আক্তার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় আবেদন নেওয়া হচ্ছে না। আমার জন্মনিবন্ধন করা খুব জরুরি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’

পৌরসভার ইপিআই সুপারভাইজার মোমরেস সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। করোনার ভ্যাকসিন ও শূন্য থেকে ১১ মাস বয়সী বাচ্চাদের দেওয়ার জন্য ভ্যাকসিন রয়েছে। আজ (বুধবার) করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি রয়েছে। আমাদের এখানে দুটি ডিপ ও দুটি সাধারণ ফ্রিজ রয়েছে। ফ্রিজগুলোতে ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষিত। এখানে করোনার ভ্যাকসিনের চার হাজার ডোজ রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ভ্যাকসিন কয়েক হাজার টিকা রয়েছে। কিন্তু গতকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজগুলো বন্ধ হয়ে আছে।’

পৌরসভার হেপাটাইটিস বি কার্যক্রমের কর্মী নার্গিস বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের ভ্যাকসিন দিতে পারছি না। অন্ধকারে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় বাথরুমগুলোতে পানি নেই। এক কথায় আমরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছি।’

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ব্যাপারে পৌর মেয়রের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর হয়েছি দুই বছর। এই দুই বছরে ২৪টি মাসিক সমন্বয় সভা হয়েছে। কিন্তু কোনো সভায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার ব্যাপারে অবহিত করা হয়নি। এখন আমরা অন্ধকার মধ্যে আছি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন জন্য দায়ী একমাত্র মেয়র। এই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের জন্য মেয়রের বিচার জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম।’

এদিকে, পৌরসভায় মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কার্যালয়ে যাওয়া হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার রুমটি বাইরে থেকে তালা মারা অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে মেয়রকে মোবাইল করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে কলটি কেটে দেন।

এ বিষয়ে দিনাজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান বলেন, ‘দিনাজপুর পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ ও ২-এর মোট ১৮ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ এর অফিসটি দিনাজপুর পৌরসভার জমির ওপর। এখানে ভাড়া বাবদ প্রায় ৭০ কোটি টাকা তাদের কাছে আমাদের পাওনা রয়েছে।’

এ ব্যাপারে দিনাজপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শাহাদত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের বিল বকেয়া রয়েছে। কিন্তু তারা টাকা পরিশোধ করছে না। তাই পৌরসভা ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানে।’

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে পৌরসভার পাওনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘পৌরসভা জমি ভাড়া বাবদ যদি কোনো টাকা পেয়ে থাকে তাহলে আমাদের কাগজপত্র দেখাক। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারে না।’

দিনাজপুরেরর সিভিল সার্জন ডা. বোরহন-উল হক সারাবাংলাকে, ‘পৌরসভায় আমাদের ভ্যাকসনি রয়েছে। আইসল্যান্ড রেফ্রিজারেটর থাকলে ৭২ ঘণ্টা ভ্যাকসিন ঠিক থাকে। বিষয়টি জানার পর ভ্যাকসিনগুলো বিকল্প জায়গায় ফ্রিজারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সারাবাংলা/পিটিএম

দিনাজপুর পৌরসভা বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর