Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতে ‘খুন হয়েছে’ শিবির ক্যাডার ম্যাক্সন-দাবি পরিবারের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ নভেম্বর ২০২২ ২২:৪০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: একসময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. নুরনবী ম্যাক্সন পলাতক অবস্থায় ভারতে মারা গেছে বলে তথ্য পেয়েছে তার পরিবার। বিষয়টি তার পরিবারের পক্ষ থেকে অবহিত করা হলেও দাফতরিক কোনো তথ্য না পাওয়ায় নগর পুলিশ এর সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

তবে এক দশক আগে ম্যাক্সনসহ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে তোলপাড় সৃষ্টি করা নগর পুলিশের কর্মকর্তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিয়ে তারা ভারতে ম্যাক্সনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে ভারতের দক্ষিণ কোলকাতা পুলিশ স্টেশন থেকে এক কর্মকর্তা ফোন করে ম্যাক্সনের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানান তার ভাই আবসার উদ্দিন। তার দাবি, ম্যাক্সনকে মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে একটি লাশের ছবি সকালে সারাবাংলার কাছে এসেছে। সেই ছবি দেখে নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ম্যাক্সনের চেহারার সঙ্গে লাশের মিল আছে।

মো. নুরনবী ম্যাক্সন (৪০) চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার জাহানপুর এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে।

চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশপরগণার বারানগর থানার ডানলপ এলাকা থেকে দেশটির সিআইডি ম্যাক্সনকে গ্রেফতার করেছিল। তার বিরুদ্ধে ওইদিনই স্থানীয় বারানগর থানায় বিদেশি নাগরিকত্ব আইনে মামলা দায়ের হয়। চট্টগ্রাম নগর পুলিশ ৭ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি দাফতরিকভাবে অবহিত হয়েছিল।

ম্যাক্সনের ভাই আবসার উদ্দিন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, দক্ষিণ কোলকাতার এক নারীর সঙ্গে ম্যাক্সনের চুক্তিভিত্তিক বিয়ে হয়েছিল। ওই নারী বিয়ের প্রমাণপত্র আদালতে দাখিল করলে গ্রেফতারের তিনদিনের মধ্যেই তিনি জামিন পান। এরপর থেকে তারা বর্ধমান জেলার কালীগঞ্জে একটি বাসায় একসাথে বসবাস করে আসছিলেন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ম্যাক্সন বাংলাদেশে তার ভাই আবসারকে ফোন করে জানান, তিনি ভারতের পাসপোর্ট পেলেও চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করা ওই নারী সেটা আটকে রেখেছেন। তাকে চার লাখ টাকা দেয়ার পরও আরও আড়াই লাখ টাকার জন্য পাসপোর্ট দিচ্ছে না। সোমবার রাতে এ নিয়ে ঝগড়া হলে ম্যাক্সন ওই নারীকে থাপ্পড় মারেন। তখন ওই নারী বেরিয়ে বাসা থেকে যায়।

‘ম্যাক্সন হতাশার কথা জানিয়েছিল। টাকা লাগবে বলেছিল। সেটাই আমার সঙ্গে শেষ কথা। রাত ১০টার দিকে আবার ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। গভীর রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও তার মোবাইলে সংযোগ পাইনি। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ স্টেশন থেকে এক কর্মকর্তা আমার মোবাইলে ফোন করে বলেন- ম্যাক্সন আত্মহত্যা করেছে। তাকে বাসার ভেতর ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আমি ভিডিও কলে দেখি, ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলেও পা মাটির সঙ্গে লাগানো। আমি বললাম, এটা কোনোভাবেই আত্মহত্যা হতে পারে না।’

দক্ষিণ কোলকাতা পুলিশ স্টেশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য পাবার দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ লাশ নামিয়ে ওই নারীসহ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে সে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে- ম্যাক্সনকে মদের সঙ্গে ১৫টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।’

ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে, খুন-চাঁদাবাজির অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর বায়োজিদ বোস্তামি ও পাঁচলাইশ থানায় ১৩টি মামলা আছে।

বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরওয়ার জাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাক্সনের ভাই নুরুল আলম আজ (বুধবার) সকালে থানায় এসেছিলেন। তিনি ম্যাক্সনের মৃত্যুর বিষয়টি ভারতের পুলিশের কাছ থেকে জেনেছেন বলে আমাদের অবহিত করেন। আমরা বলেছি, অফিসিয়ালি আমরা বিষয়টি জানার পর আইনগত পদক্ষেপ নেব।’

চট্টগ্রামের একসময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী হিসেবে ম্যাক্সন ছিল ‘মূর্তিমান আতঙ্কের’ নাম। ২০০০ সালের ১২ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ আটজনকে খুনের ঘটনায় দায়ের আলোচিত এইট মার্ডার মামলার আসামি ছিল সাজ্জাদ। ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর গ্রেফতার হওয়া সাজ্জাদ বিএনপি সরকারের আমলে কারামুক্ত হয়ে দুবাইয়ে পালিয়ে যায়।

তখন সাজ্জাদের অস্ত্রভাণ্ডারসহ অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেয় ম্যাক্সন ও সরোয়ার নামে আরেক ক্যাডার। ২০১১ সালে বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ দু’টি একে ৪৭ রাইফেলসহ সরওয়ার এবং ম্যাক্সনকে গ্রেফতার করে, প্রথম গ্রেফতার হয়ে দু’জনের জেলে যাওয়া।

নগর পুলিশের কাছে তথ্য আছে, ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে যায় সরওয়ার ও ম্যাক্সন। ২০২০ সালে ম্যাক্সন কাতার থেকে ভারতে পালিয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশপরগণার ডানলপের নর্দার্ণ পার্ক এলাকায় ‘তমাল চৌধুরী’ নামে বসবাস করছিল সিএমপির মোস্ট ওয়ান্টেড এই সন্ত্রাসী। অন্যদিকে সরওয়ার ২০২০ সালে দেশে ফিরে গ্রেফতার হয়।

ম্যাক্সন-সরওয়ারকে গ্রেফতার করে আলোড়ন সৃষ্টি করা নগর পুলিশের সেই কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ম্যাক্সনের যে স্ত্রী আছে, তার মারফতে খবর পেয়েছি যে, সে ভারতে মারা গেছে। পরে আমি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। লাশের একটি ছবি পাওয়া গেছে, সেটার সঙ্গে ম্যাক্সনের চেহারার মিল আছে।’

সারাবাংলা/আরডি/ এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর