রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট শুরু কাল
৩০ নভেম্বর ২০২২ ২৩:৩৫
রাজশাহী: পরিবহন মালিকদের দাবি-দাওয়া মেনে না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন ধর্মঘট। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে এই ধর্মঘট চলবে অনির্দিষ্টকালের জন্য। এর আগে গত শনিবার নাটোরে ১০ দফা দাবি আদায়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন বিভাগীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। গত রোববার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ১০ দফা দাবিসংবলিত একটি চিঠিও দিয়েছেন নেতারা।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ১০ দফা দাবি নিয়ে এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা হয়নি। ফলে মালিকদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হচ্ছে। এর আগে মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবি না মানলে ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক সমিতি।
১০ দফা দাবির মধ্যে আছে- সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করতে হবে, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি) চলাচল বন্ধ করতে হবে, জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস করতে হবে, করোনাকালে গাড়ি চলাচল না করায় সে সময়ে ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে, সব ধরনের সরকারি পাওনাদির (ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেস) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত নানাবিধ জটিলতা নিরসন করতে হবে, পরিবহনের যাবতীয় কাগজ হালনাগাদ বা সঠিক থাকার পরও নানাবিধ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে, উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল দ্রুত বন্ধ করতে হবে, মহাসড়কে হাট-বাজার আয়োজন বা পরিচালনা করা যাবে না এবং চলমান হাটবাজার অতি দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে, যাত্রী ওঠানামার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও ট্রাক ওভারলোড বন্ধ করতে হবে।
তবে বিএনপি নেতারা বলছে, এই ধর্মঘটের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের সম্পর্ক নেই। এটি সরকারের চাপিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঠেকাতে এ ধরনের ধর্মঘট পৃথিবীর নজিরে নেই। এ ধর্মঘটে মালিক-শ্রমিক ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের মানুষ এতে দুর্ভোগে পড়েছে। এই ধর্মঘট মালিক-শ্রমিক কারও নয়, এটা সরকারের চাপিয়ে দেওয়া এবং সাজানো ধর্মঘট। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার এই কুনজির স্থাপন করেছে।’
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘যেখানে বিএনপির সমাবেশ, সেখানেই পরিবহন ধর্মঘট। হাস্যকর একটা নাটক করছে সরকার। লোকে হাসছে এসব দেখে। এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কি বাড়ছে? আমার তো মনে হয় এই পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে এই সরকার বিএনপিকে কতটা ভয় পায়। এই ধর্মঘটের সঙ্গে পরিবহন মালিক কিংবা শ্রমিকের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার বলে দিয়েছে তাই করতে হচ্ছে। এতে শ্রমিক ভাইয়েরাও কষ্ট পাচ্ছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। আমরা এই দাবিগুলো তো অনেক দিন ধরেই করে আসছি। কিছু দিন আগে আমরা সংবাদ সম্মেলন করেও এসব দাবি জানিয়েছি।’
রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক পরিষদ সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, ‘বিভাগীয় মালিক সমিতির ১০ দফা দাবি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা আলোচনার জন্য কোনো সদুত্তর দেয়নি। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু কোনো ধরনের আশ্বাস না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছেন। এর আওতায় থাকবে সব যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন।’
তিনি জানান, এই ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য। তবে ভোরের মধ্যে যদি দাবির পক্ষে আশ্বাস পান, তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের এই কর্মসূচির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সারাবাংলা/পিটিএম