Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আয়াতের বিচ্ছিন্ন মাথা পাওয়া গেছে: পিবিআই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৫০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: খুনের পর কেটে ৬ টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া শিশু আয়াতের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মাথা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। দুই পায়ের পর মাথাসহ এ নিয়ে শরীরের তিনটি খণ্ডিতাংশ উদ্ধার করা হলো।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে নালাসংলগ্ন স্লুইচগেট এলাকা থেকে মাথাটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) মর্জিনা আক্তার।

‘স্লুইচগেটে আটকে থাকা পানির মধ্যে জমা পলিথিনে তল্লাশি করে মাথাটি পাওয়া গেছে। আবির আলী যেভাবে বর্ণনা দিয়েছিলেন সেভাবেই কচটেপ মোড়ানো পলিথিনের ভেতরে মাথাটি পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে আয়াতের স্বজনরা যাচ্ছেন’, বলেন মর্জিনা।

এর আগে, বুধবার দুপুরে একই এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন দুই পায়ের অংশ পাওয়া যায়, পরে আয়াতের বাবা-দাদাসহ স্বজনরা গিয়ে সেগুলো শনাক্ত করেন।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় স্লুইচগেটের চারটি প্রকোষ্ঠের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর একটি প্রকোষ্ঠে আটকে যাওয়া পলিথিনে পা দু’টি পাওয়া যায়, যেগুলো আবিরের বর্ণনামতো পলিথিনের ভেতর কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল।


গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার মেয়ে চার বছর ১১ মাস বয়সী আলীনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হন। ১০ দিন পর ২৪ নভেম্বর পিবিআই আবির আলীকে গ্রেফতারের পর জানায়, আয়াতকে শ্বাসরোধে খুন করে লাশ কেটে ছয় টুকরো করে আবির। এরপর সেগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

আবিরকে নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর পিবিআই টিম তার বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্য আরও যাচাইবাছাই এবং আনুষাঙ্গিক প্রমাণ সংগ্রহে পিবিআই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে। প্রথম দফায় ২৬ নভেম্বর আবিরকে দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত।

২৭ নভেম্বর পিবিআই টিম আবারও তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ২৮ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় আরও সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর ২৯ নভেম্বর আবিরের বাবা, মা ও ১৫ বছর বয়সী ছোট বোনকে গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

পানিপ্রবাহ আটকে ৭২ ঘণ্টার তল্লাশিতে মিলল আয়াতের ‘দুই পা’

পিবিআইয়ের ভাষ্যমতে, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আজহারুলের ছেলে আবির আলী। পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আবিরকে আয়াত ‘চাচ্চু’ বলে সম্বোধন করতো। ১৫ নভেম্বর বিকেলে বাসার সামনে থেকে আয়াতকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে আবির ঢুকে যায় তার বাবার বাসায়, যেখানে তখন কেউ ছিল না। সেখানে ১৫ মিনিটের মধ্যে শ্বাসরোধ করে আয়াতকে খুন করে আবির।

এরপর লাশ ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় নগরীর আকমল আলী সড়কের পকেটগেট বাজার এলাকায় তার মা আলো বেগমের বাসায়। মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদের পর আবির মায়ের বাসায় থাকত। তবে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যে এলাকায়, সেই বাবার বাসায়ও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আবির মায়ের বাসায় নিয়ে লাশ বাথরুমের তাকের ওপর লুকিয়ে রাখে। রাতে সেই লাশ বাথরুমে নিয়ে কেটে ছয় টুকরা করে ছয়টি ব্যাগে ভরে রাখে।

পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির।

কিন্তু মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সংগ্রহ করা সীম ব্লক থাকায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি আবির। আয়াতের খেলার সঙ্গীদের কাছ থেকে তাকে কোলে নেওয়ার তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আবিরের গতিবিধি দেখে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

আয়াত আলীনা ইসলাম আয়াত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর