লুডু খেলা নিয়ে ঝগড়ার মধ্যে ‘থাপ্পড়ের জবাবে লাথি’
১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দুই আইনজীবীর মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, যারা যুব মহিলা লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। লুডু খেলায় অংশ নেওয়া এই দুই আইনজীবীর একজন তার ‘গায়ে হাত তোলার’ এবং অপরজন তাকে ‘লাথি মারার’ অভিযোগ করেছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ঝগড়ার একপর্যায়ে একজন জুতা খুলে মারতে গেলে আরেকজন তাকে থাপ্পড় মারেন।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের তৃতীয় তলায় সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়ে শারমিন ইয়াসমিন নিশু ও জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপার মধ্যে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
এদের মধ্যে শারমিন ইয়াসমিন নিশু নিজেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বলে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি নিপার বিরুদ্ধে গায়ে হাত তোলার অভিযোগ এনে বুধবার রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিজ বাসা থেকে নিপার ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর লাশ উদ্ধার হয়েছিল, পরবর্তীতে এই ঘটনা নিয়ে হত্যা মামলা দায়ের হয়। দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া এই ঘটনার পর ভাই হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলনে নেমে আলোচনায় আসেন নিপা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি হেরে যান।
বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) নিশু ও নিপা- উভয়েই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবরে পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে শারমিন ইসলাম নিশু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় লুডু ইভেন্টে আমি এবং উনি (নিপা) প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। খেলায় উনি হেরে যান। আমি দ্বিতীয় হই। হেরে যাওয়ার পর থেকেই উনি আমাকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য শুরু করেন। আমি ডিভোর্সি, আমার লজ্জা নেই— এ ধরনের নানা কথা বলতে থাকেন। তখন আমি সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে অভিযোগ করার জন্য ঢুকি। কিছুক্ষণ পর উনিও সেখানে ঢুকে সাধারণ সম্পাদকের সামনে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। যখন দেখলাম, সাধারণ সম্পাদক সাহেব বাধা দিচ্ছেন না, তখন আমি দ্রুত সমিতির অফিস থেকে বেরিয়ে যাই।’
সেখান থেকে বেরিয়ে রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রাতেই কোতোয়ালী থানায় গিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন বলে জানান নিশু।
অন্যদিকে জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘খেলার শুরু থেকেই সে (নিশু) খুব বাজে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিল। আমাকে দেখে…(প্রকাশ অযোগ্য শব্দ) বলে ডাকাডাকি শুরু করেন। সমিতির বর্তমান সাংস্কৃতিক সম্পাদক লায়লা নূর এর প্রতিবাদ করলে সে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়। সে মারমুখী হয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে। তখন আমি সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে ঢুকে যাই। সে ভেতরে গিয়ে আমাকে লাথি মারে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিশু ২০২১ সালে বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আর নিপার প্র্যাকটিসের বয়স ৬-৭ বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের আইনজীবীদের নিয়ম হচ্ছে, আমরা সবসময় সিনিয়রকে শ্রদ্ধা এবং সম্মানের চোখে দেখি, সমীহ করে চলি। কিন্তু নিশু এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে সমিতির সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিপা এবং বর্তমানে ওই পদে থাকা লায়লা নূরের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
‘বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিশু ও নিপা দুজনই লুডু খেলায় অংশ নেন। সেখানে তাদের মধ্যে কী নিয়ে ঝগড়া হয়েছে জানি না, উভয়ে আমার কক্ষে আসেন অভিযোগ দিতে। সেখানে নিশু নিপাকে জুতা খুলে মারতে যান। নিপা তখন তাকে থাপ্পড় দেন। উভয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে নিশুর বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন অভিযোগ আছে। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব’— বলেন জিয়াউদ্দিন
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর আইনজীবী শারমিন ইয়াসমিন নিশু’র জিডিতে আনা অভিযোগ যাচাইবাছাই করা হবে বলে জানিয়েছেন।
নিশু ও নিপা- উভয় আইনজীবীই জানিয়েছেন, রাজনৈতিক এবং পেশাগত কারণে তাদের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ আছে।
শারমিন ইয়াসমিন নিশু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বড় বোনও আইনজীবী। তিনি সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হলে উনি (নিপা) প্রকাশ্যে সমর্থন দিলেও আড়ালে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে আমার আপাকে হারিয়ে দেন। এরপর জেলা পরিষদ নির্বাচনে উনি যখন প্রার্থী হন, তখন আমরা উনার পক্ষে কাজ করিনি। এজন্য উনি নানাভাবে আমাকে সবসময় হ্যারাস করার চেষ্টা করে আসছিলেন।’
নিশুকে দিয়াজ হত্যা মামলার এক আসামির স্ত্রীর ‘বান্ধবী’ দাবি করে জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিশুর সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমি যখন সমিতির নির্বাচনে দাঁড়াই, তখন নিশু বিভিন্নভাবে আমার নামে কুৎসা রটাতে শুরু করে। দিয়াজ হত্যার আসামিরা আমার নামে যেসব অপপ্রচার করেছে, সেগুলোর স্ক্রিনশর্ট আইনজীবীদের মেসেঞ্জারে দিতে থাকে। এমনকি আমার চাচার মেসেঞ্জারেও দিলে আমি বিষয়টি জানতে পারি।’
‘তখন দিয়াজের খুনিদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি আমার কাছে পরিস্কার হয়ে গেলে আমি তাকে ফেসবুকে বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিই। এতে সে আরও ক্ষুব্ধ হয়। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে আমার বিরোধিতা করে’— বলেন নিপা
সারাবাংলা/আরডি/একে