রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের দাবি
১ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:১৭
ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি তুলে বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনগুলো এক যৌথ বিৃবতিতে বলেন, চুক্তির গত ২৫ বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে কাঙ্ক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং দিনকে দিন পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই চুক্তির বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ওইসকল সংগঠনের নেতারা উল্লেখ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমন মারমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাশ আলো এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ২৫ বছরেও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে কাঙ্ক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং পরিস্থিতি বছরের পর বছর জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৪ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ৭২টি বিষয়ের মধ্যে ৪৮ টি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে যা অসত্য এবং অপপ্রচার মাত্র। প্রকৃতপক্ষে চুক্তির ২৫ টি বিষয় বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র। মৌলিক বিষয়সহ এখনো চুক্তির দুই তৃতীয়াংশ বিষয় অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চুক্তির মৌলিক বিষয়— পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে সাধারণ প্রশাসন, আইন—শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদিসহ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর করা, নির্বাচনী বিধিমালা ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন পূর্বক আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা, অপারেশন উত্তরণ’ ও সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা, বিধিমালা প্রণয়ণ করে ভূমি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে বেদখল হওয়া জায়গা—জমি জুম্মদের নিকট ফেরত দেওয়া, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদেও তাঁদের স্ব স্ব জায়গা—জমি প্রত্যার্পণ পূর্বক যথাযথ পুনর্বাসন প্রদান করা, অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিল করা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকরিতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ করা, চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে ১৮৬১ সালের পুলিশ এ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন, ১৯২৭ সালের বন আইন ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধনের মত বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে জুম্ম জনগণের ঘরবাড়ি তল্লাসী, গ্রেফতার, ক্রসফায়ারের নামে বিচার—বহিভুর্ত হত্যা, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের, নারীর প্রতি সহিংসতা, অনুপ্রবেশ, ভূমি বেদখল, চুক্তি বিরোধী অপপ্রচার ইত্যাদি মানবতা ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম বাড়ছে।
তারা আরো বলেন, আমরা ক্রমাগত লক্ষ্য করছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে কেবল বন্ধই রাখা হয়নি। একই সাথে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যা মামলা, ধরপাকড়, হামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে কোণঠাসা ও নস্যাৎ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে গড়ে ওঠা ইউপিডিএফ, জনসংহতি সমিতি(সংস্কারপন্থি), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগপার্টি, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট( বম পার্টি), বহিরাগত সেটেলার বাঙালিদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী জঙ্গি—গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেরকম কোনো তৎপরতা দেখায় যায়নি, বরং তাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চুক্তির বিধান অনুযায়ী অস্থায়ী ক্যাম্পসমূহ স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেওয়া বিষয়ে কোনো সময়—সীমা এখনো নির্ধারিত হয়নি। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিডিআর বর্তমানে বিজিবি) ও ৬টি স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলিকদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত প্রায় চার শতাধিক সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্যান্য অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে পযার্য়ক্রমে স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেওয়া হয়নি।
সরকারকে চুক্তিবিরোধী ও জুম্মস্বার্থ পরিপন্থি সব যড়যন্ত্র ও কার্যক্রম বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান সংগঠনগুলোর নেতারা।
সারাবাংলা/জেআর/একে