Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুই দিনে ৫৩৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার: বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:১৭

ঢাকা: ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে গত দুই দিনে বিএনপির ৫৩৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবরি রিজভী।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সারাদেশের চিত্র তুলে ধরে রিজভী জানান—মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম কাড়াল, উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম বাদশা, তন্তর ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল হাসান শাহাবুদ্দিন, শ্রীনগর ইউনিয়ন যুবদল নেতা বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি ও হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় বিএনপির সদস্য সচিবসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান— সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক শেখ মো. আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করে ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় মধ্যপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি আহ্বায়ক আজিম আল রাজী ও বালুচর ইউনিয়ন বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুক হোসেন, রসুনীয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কামরুল হাসান দেওয়ান, রাবদী ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. রফিকুল ইসলাম, জামপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. ফারুক, মো. বাদল, মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. জামাল হোসেন ও যুবদল নেতা মো. আরিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ ছাড়া যুবদল নেতা আল আমিন ও বিএনপি নেতা লাল মিয়া মুন্সিগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান ময়মনসিংহ মহানগর ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল পাঠানসহ ৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলা বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, হেলাল খানসহ ১০ জনকে গ্রেফতার ও ৩৫ জনের নামে বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৮ জনকে। জেলা যুবদল সভাপতি জীবন দাশসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দেওয়া হয়েছে।

রিজভী আরও জানান গাজীপুর মহানগর ছাত্রদল সাবেক সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলমকে দুপুরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কাউলতিয়া থানা যুবদলের আহ্বায়ক নাজমুল সরকার, কাশিমপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম শাহীন ও সদস্য সচিব কেএম হাফিজুর রহমান রাজো, কোনাবাড়ি থানা যুবদলের সদস্য সচিব আজিজুল ইসলামকে বিনা ওয়ারেন্টে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে।

তিনি জানান, গাজীপুর সদর থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আজহার মেম্বার, দুলাল মোল্লা, জাকির, মোখলেছ ব্যাপারীসহ কমপক্ষে ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রিজভীর অভিযোগ ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলায় গতকাল (১ ডিসেম্বর) জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সহোদর মোশাররফ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত না হওয়া সত্বেও শহিদুল ইসলাম বাবুলের ভাই এ কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পারিবারিকভাবে ফোর্টিন জেনারেশনে তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। এটি কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা-তা বোধগম্য নয়। এই ঘটনা ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম এর বাসার কেয়ারটেকার নুর আলমসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউমার্কেট থানা ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতা লোকমান হোসেন মো. বাবুল, মো. বাবু, কলাবাগান থানা শ্রমিক দল নেতা রাসেল হাওলাদার, ছাত্রদল নেতা মো. ইয়াসিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সদস্য আবুল কাউসার, কলাবাগান থানাধীন ১৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মো. মিন্টুকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া কলাবাগান থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইয়াসিন, ধানমন্ডি থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো পলাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি জানান কাফরুল থানা বিএনপি শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও জিসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন হেলালকে ৩০ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছে, ঢাকা জেলা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু সেলিম চৌধুরীকে ২৪ নভেম্বর রাতে কেরানীগঞ্জের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নারায়ণঞ্জের ফতুল্লা থানা কুতুবপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলামসহ গত দুই দিনে ঢাকা এবং আশাপাশের জেলা থেকে কমপক্ষে ৫৩৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, যাদের একমাত্র সাধনা অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখা। ক্ষমতা লাভের আগে বা পরে কোনো সময় তারা ন্যায়নীতি গ্রাহ্য করেনি। এ কারণেই গণতন্ত্রের নাম শুনলেই তারা চমকে ওঠে। যেন তেন প্রকারে ক্ষমতায় এসেই আঁটঘাট বেঁধে গণতন্ত্র, গণঅধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লাগে।

রিজভী বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিএনপির জনসমাবেশে জনতার বিপুল পরিমাণ সমাগম দেখে আওয়ামী সরকার তেলেসমাতি শুরু করেছে। ঢাকা বিভাগসহ সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেফতার করতে কান্ডজ্ঞানহীন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, ‘আগুন সন্ত্রাসের মতো অপরাধ করে উল্টো বিএনপির ওপর দায় চাপানোর এক নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন চালু করেছে আওয়ামী লীগ। ওরা আগুন ছড়ানোর গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। পুরনো হাতিয়ার শান দিয়ে নতুন করে সেটির ব্যবহার করছে। এরা আগুন সন্ত্রাসের মডেল পুনরায় ব্যবহার করছে। যার নমুনা দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে। এক্ষেত্রে পুলিশ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ‘

রিজভী বলেন, ‘নয়াপল্টনে বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে অবৈধ সরকার বিচার-বিবেচনাবোধহীন চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। বিএনপি সব দিক বিবেচনা করে ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত দিলেও পুলিশ শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জোর জবরদস্তি করছে। এটি একটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

বিএনপি বিশেষ অভিযান রিজভী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর