সড়ক পরিবহন আইনের পরিপূর্ণ প্রয়োগের দাবি নিসচা’র
২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:০৬
ঢাকা: সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর পরিপূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)।
শুক্রবার (২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠনটির ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে এমন দাবি জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কয়েকজনকে ছাগল প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
এতে নিসচার পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের নিসচা’র পক্ষ সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে ৩৮০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। এ বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে ৩০০টি ছাগল বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, বিনামূল্যে চক্ষু ক্যাম্প পরিচালনা, ১০টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান, সেলাই মেশিন বিতরণ করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আজকের অনুষ্ঠান থেকে এই সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে দায়ের করা মামলাগুলো সরকারি খরচে পরিচালনা করা এবং পরিবহন শ্রমিকদের সন্তানদের বিনা বেতনে স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিসচা’র নেতারা বলেন, তিন দশকের পথচলায় নিসচা’র কর্মীবাহিনী সুশৃঙ্খলভাবে সড়কে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত রয়েছে। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সড়কের নিরাপত্তার কথা বলে আসলেও দেশের যেকোনো দুর্যোগ এবং অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জনকল্যাণমুখী কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকে। এই কর্ম পরিকল্পনায় নগদ অর্থসহ আয়মূলক বিভিন্ন লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- মোমবাতি তৈরির মেশিন প্রদান, হুইল চেয়ার বিতরণ, দুর্ঘটনায় পা হারানোদের কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেওয়া, ক্র্যাচ প্রদান, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ছোট দোকান তৈরি করে দেওয়া (পুঁজিসহ), গরু-ছাগল প্রদান, সেলাই মেশিন বিতরণ, গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেওয়া এবং শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ।
নিসচা’র নেতারা আরও বলেন, সড়কের নিরাপত্তায় জাতিসংঘ একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে। সড়কের নিরাপত্তার জন্য নিসচা’র প্রতিটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তা (রোড সেফটি) নিয়ে আমরা যারা কাজ করছি, আমরা ১১১টা পরামর্শ দিয়েছি। প্রতিটি পরামর্শকে পরিকল্পনার মধ্যে ফেলে বাস্তবায়নের জন্য সাজাতে হবে এবং কার্যকর করতে হবে।
‘পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮- এর পরিপূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেই ১১১টি পরামর্শের এখন কী
অবস্থা তাও জানি না। আর আইনের কথা কী বলব? চার বছর তো চললো এই আইনের এখনো বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। অথচ এই বিধিমালার জন্য আইনটি এক প্রকার অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। অথচ এমন কিছু সমস্যা আছে আইন ছাড়া নিরসন করা অসম্ভব। তাহলে বিধিমালা ছাড়া আপনি আইনটাকে প্রয়োগ করবেন কীভাবে। আর আইন ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা যে কাঙ্ক্ষিত স্থানে নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে, সেই টার্গেট কি পূরণ হবে। নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠিত হবে কি? আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শপথ করি বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। যে শহীদদের রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসুন এই দেশকে সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করি’- বলেন সংগঠনটির নেতারা।
নিসচা’র মহাসচিব লিটন এরশাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নিসচার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, নিসচা’র দফতর সম্পাদক ফিরোজ আলম মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন, নিসচা’র নির্বাহী সদস্য মো. রোকনুজ্জামান রোকনসহ আরও অনেকে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস