চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রচারণা উৎসবে ভোটের আমেজ
২ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’- ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এই গানটি প্রচারণায় ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ, নেতাকর্মী, সমর্থকদেরদের মুখে মুখে ফিরছিল গানটি। সেই গান আবারও দিনরাত বাজছে চট্টগ্রাম শহরের রাজপথে, অলিগলিতে। শুধু এই গান নয়, নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে নানা কথায়, নানা সুরে আরও গাওয়া গান, দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের রণসঙ্গীত বাজিয়ে নগর থেকে গ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরও এক বছর বাকি থাকলেও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার প্রচারণায় ভোটের আমেজ ফিরিয়ে এনেছেন নেতাকর্মীরা। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলা এই প্রচারণা শেষমুহুর্তে এসে রীতিমতো উৎসবের রূপ নিয়েছে।
পিকআপে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে, সিএনজি অটোরিকশা-রিকশায় মাইক বেঁধে, মোটর সাইকেল-বাই সাইকেল শোভাযাত্রা, গণমিছিল, সমাবেশের মধ্য দিয়ে নগরী-উপজেলায়, ইউনিয়ন-গ্রামে শেষ সময়ের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জনসভার দুইদিন আগে শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) বন্দরনগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ‘শেখ হাসিনার সালাম নিন ,নৌকা মার্কায় ভোট দিন’- এমন গানে-স্লোগানে মুখর প্রচারণার নানা চিত্র দেখা গেছে।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভা হবে, যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নগরীর নিউমার্কেট মোড়, কোতোয়ালী, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় সড়কের পাশে লাগানো মাইকে বিরামহীনভাবে চলছে প্রচার। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, গান আর ফাঁকে ফাঁকে পলোগ্রাউন্ডে শেখ হাসিনার জনসভায় যোগদানের আহ্বান। খণ্ড খণ্ড মিছিলে স্লোগান দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা- শেখ হাসিনার সরকার,বারবার দরকার।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে, এমনটাই মত দলের নেতাদের।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আগামী নির্বাচনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। এটা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য সুখবর। এই প্রাণচাঞ্চল্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনে আবারও দলকে ক্ষমতায় আনবে।’
জনসভার প্রচারণায় ভোটের আমেজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামনে যেহেতু নির্বাচন, যে কোনো দলের জনসভাকে ঘিরে ভোটের আমেজ সৃষ্টি হবে, এটা স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে সবার চেয়ে আলাদাভাবে দেখেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামবাসীর জন্য অনেক উন্নয়ন করেছেন, আরো করবেন। সেজন্য উৎসবমুখর পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেয়ার জন্য চট্টগ্রামবাসী অপেক্ষা করছেন।’
নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমেজ যেটা সৃষ্টি হয়েছে, সেটা চট্টগ্রামে মানুষের মাঝেই হয়েছে। এটা মূলত প্রধানমন্ত্রীর জন্য। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করেছেন। আরও নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রামবাসীর মনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা আবেগ আছে। সেজন্য নির্বাচনের আরও এক বছর বাকি থাকতেই প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে ভোটের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রচারণায় চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী এম আর আজিমের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেলে মোটর সাইকেল র্যালি বের হয়। শতাধিক মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে তিনি নগরীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে লিফলেট বিলি করেন। র্যালিতে নেতাকর্মীদের হাতে হাতে ছিল বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান চৌধুরী নিখিলের ছবিসম্বলিত প্ল্যাকার্ড।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরশেদুল আলম বাচ্চুর উদ্যোগে নগরীর আকবরশাহ্ থানা এলাকায় পথসভার মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা মামুনুর রশীদ মামুনের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল করেছে নগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিকেলে নগরীর সিআরবি থেকে সাইকেল র্যালির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার জনসভার প্রচারণা চালিয়েছে নগর ছাত্রলীগ। মাথায় প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সেই ‘লাল টুপি’, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্লোগান দিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করেন।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভার জন্য আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে গত ১০ দিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছি। প্রতিদিন ২০-৩০টি পিকআপে করে পুরো শহর ঘুরে ঘুরে প্রচারণা চালানো হয়েছে। জনসভার আর মাত্র দুইদিন বাকি। আজ (শুক্রবার) আমরা সাইকেল র্যালি করেছি। প্রথমে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, মোটর সাইকেল র্যালি করবো। কিন্তু শব্দদূষণ এড়াতে আমরা বাই সাইকেল নিয়ে র্যালি করেছি।’
৫০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের এই নেতা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে সংস্কার হচ্ছে রাস্তাঘাট। বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন, দেয়াল লিখন, আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে বন্দরনগরীর এখন এক ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে।
সারাবাংলা/আইসি/একে
আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম জনসভা পলোগ্রাউন্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা