‘মা-বাবার অপমান সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা আত্মহত্যা করে’
৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:০৫
ঢাকা: ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর, চার বছর হলো অরিত্রী আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে অরিত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তা সত্য নয়। মামলাটি শেষপর্যায়ে চলে এসেছে। এখন দেখা যাক আদালত কি করেন। আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি। মা-বাবার অপমান সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা আত্মহত্যা করে— বলছিলেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ২৭ নভেম্বর মামলাটির তারিখ ধার্য ছিল। ওইদিন মামলার সর্বশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদারকে জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। এরপর বিচারক আগামী ২৫ জানুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘সেদিন যদি তারা (শিক্ষকরা) আমাদের আলাদা ডেকে নিয়ে কথাগুলো বলতেন, তাহলে আর মেয়েকে হারাতে হতো না। মেয়েকে তো আর ফিরে পাবো না। তবে তার সঙ্গে যারা খারাপ ব্যবহার করেছে, অন্যায় আচরণ করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে; যার জন্য ওকে পৃথিবী ছেড়ে অকালে চলে যেতে হয়েছে তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয় সেজন্য লড়ে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘অরিত্রী ছিল চৌকষ, সবদিক দিয়ে সে ছিল মেধাবী। আমাদের আশা ছিল, সে ভালো রেজাল্ট করবে। কিন্তু তা তো হলো না। ঐন্দ্রিলা উদয়ন স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমরা এটা বুঝেছি, স্কুল কোনো ফ্যাক্ট না। শাসন না করেও ভালো করা যায়। ঐন্দ্রিলার ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। বোন মারা গেছে। একা পড়াশোনা করে নিজেকে সে তৈরি করেছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাবিনা আক্তার (দিপা) বলেন, ‘এটি একটি আলোচিত মামলা। বাবা-মাকে শিক্ষকরা অপমান করছিল। সেই অপমান সইতে না পেরে অরিত্রীকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। অরিত্রীর বাবা-মা মেয়েকে হারিয়েছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে চেষ্টা করছি। আমরা চাই, এ রায়ের মধ্য দিয়ে মামলাটি নজির স্থাপন হোক। এভাবে কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীকে অপমান করবে না, বকা দিবে না। আর কোনো অরিত্রীকে আত্মহত্যা করতে হবে না।’
২০১৯ সালের ২০ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম ওই দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শ্রেণিশিক্ষিক হাসনা হেনাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তিনি।
চার্জশিটভুক্ত দুই শিক্ষক হলেন- ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিন্নাত আরা। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিনাত আক্তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই চার্জগঠন করে বিচার শুরু আদেশ দেন আদালত। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর পরীক্ষা চলাকালে অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান শিক্ষক। মোবাইল ফোনে নকল করেছে— এমন অভিযোগে অরিত্রীর মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। দিলীপ অধিকারী তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। অধ্যক্ষের কক্ষে গেলে তিনিও একইরকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে শান্তিনগরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে। ওই ঘটনার পরদিন পল্টন থানায় তার বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় স্কুলের অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষকেকে বরখাস্ত করা হয়।
সারাবাংলা/এআই/এমও