প্রস্তুত চট্টগ্রাম, অপেক্ষা শেখ হাসিনার
৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রচার-প্রচারণায় জোয়ার তুলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জনসভার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। ১০ বছর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত পলোগ্রাউন্ড ময়দান, অপেক্ষায় দলটির নেতাকর্মীরা। জনসভায় ১০ লাখ জনসমাগমের টার্গেটের কথা জানিয়েছেন একদিন আগেই চট্টগ্রামে আসা দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভা হবে, যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবার তিন বছর পর ২০১২ সালে এই পলোগ্রাউন্ডে সর্বশেষ জনসভায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়নি।
শনিবার সকালে দেখা গেছে, পৌনে ৫ লাখ বর্গফুটের পলোগ্রাউন্ড ময়দানের শেষপ্রান্তে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের এই মঞ্চে ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূল মঞ্চ থেকে ৩০ মিটার সংরক্ষিত রেখে পশ্চিমে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের বসার জন্য আলাদা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। পূর্বদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এবং মাঝখানে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
ঢাকার কলরেডি থেকে আনা হয়েছে ৩০০ মাইক। জনসভাস্থল ছাড়াও নিউমার্কেট, সিআরবি, লালখানবাজার মোড়, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ হয়ে কদমতলী পর্যন্ত লাগানো হচ্ছে মাইক। জনসভাস্থলের বাইরে সড়কে লাগানো হচ্ছে বড় পর্দা, যারা ভেতরে ঢুকতে পারবেন না তারা এই পর্দায় দেখবেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য।
শনিবার থেকে পলোগ্রাউন্ড ময়দানের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে পুরো জনসভাস্থল এবং এর আশপাশের এলাকা। দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পদবিধারী নেতার বাইরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না সেখানে, ঢুকতে পারেননি গণমাধ্যম কর্মীরাও।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের মোতায়েন শেষ হয়েছে। এছাড়া এসএসএফ, পিজিএফ, সাদা পোশাকের পুলিশ, ইউনিফর্মের পুলিশ, গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা মিলে পুরো জনসভাস্থল ঘিরে রেখেছে। সেখানে যারা ঢুকবেন তাদের অবশ্যই আর্চওয়ে পার হতে হবে। এরপর তল্লাশি শেষে সবাইকে ঢুকতে দেয়া হবে।
নগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ অতিথি, যারা মঞ্চে উঠবেন, তাদের জনসভাস্থলে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য মঞ্চের পেছনে আলাদা গেইট করা হয়েছে। মঞ্চের পূর্বদিকে মহিলাদের জন্য আলাদা গেইট আছে। আর মিছিল নিয়ে যারা আসবেন তাদের মূল গেইট দিয়ে ঢুকতে হবে।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে সিএমপি। নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে রেডিসন ব্লু গোলচত্বর, ইস্পাহানি মোড়, টাইগারপাস হয়ে পলোগ্রাউন্ড সমাবেশস্থল পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যা বলবৎ থাকবে প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম ত্যাগের আগপর্যন্ত। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আন্তঃজেলার কোনো যাত্রীবাহী বাস শহরে ঢুকতে পারবে না।
নগরীর হাইলেভেল রোড, ওয়াসার মোড়, জমিয়াতুল ফালাহ্ পশ্চিম গেট ইউটার্ন, লালখানবাজার ফ্লাইওভারের নামার মুখ, আলমাস মোড়, চানমারি রোড, ম্যাজিস্ট্রেট কলোনি রোডের মুখ, সিটি করপোরেশন অফিস গলির উভয় মুখ, দেওয়ানহাট ব্রিজের মুখ, টাইগারপাস মোড়, আমবাগান রেলক্রসিং, কাজির দেউড়ি, নেভাল এভিনিউ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট, রেলওয়ে অফিসার্স কলোনি মসজিদ, কুক আউট রেস্টুরেন্ট, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কাঠের বাংলো, ফ্রান্সিস রোড, আটমার্সিং, এনায়েত বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, কদমতলী মোড়, নিউমার্কেট মোড়, সিটি কলেজ মোড়, অভয়মিত্র ঘাট, নতুন ব্রিজ, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে ওঠার মুখ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট পুলিশ বঙের সামনে, ফ্লাইওভারে ওঠার মুখ, পেনিনসুলা হোটেলের সামনে, শহীদ শাহজাহান মাঠের সামনে, পাঞ্জাবি লেনের মুখ, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় সড়কে ব্লক ও ডাইভারশন দেওয়া থাকবে।
টাইগারপাস থেকে সব গাড়ি উল্টো পথে এসে ড্রপ করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়ি ইউটার্ন করে কাঠের বাংলো দিয়ে সিআরবিতে চলে যাবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য, জিওসি–২৪ পদাতিক ডিভিশন, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজির গাড়ি সোজা সামনে গিয়ে রেলওয়ে পাবলিক স্কুল মাঠে প্রবেশ করবে।
এছাড়া শাহ আমানত ব্রিজ গোল চত্বরের পশ্চিম পাশে, কদমতলী মোড়, ষোলশহর রেলস্টেশনের সামনের রাস্তা, শহীদ শাহজাহান মাঠ ও আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় এলাকায় ড্রপিং পয়েন্ট থাকবে। সমাবেশে আসা গাড়ি ব্রিজ থেকে কালামিয়া বাজার এক্সেস রোড, শুভপুর টার্মিনাল, ফরেস্ট গেট (বন গবেষণা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ), বহদ্দারহাট টার্মিনাল, শহীদ শাহজাহান মাঠ (আমবাগান রোড), আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও অলঙ্কার আলিফ গলিতে পার্কিংয়ের জন্য বলা হয়েছে।
সমাবেশস্থলে পার্কিংয়ের জন্য মন্ত্রী, মেয়র, এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা, জিওসি– ২৪ পদাতিক ডিভিশন, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজির জন্য আলাদা ড্রপিং পয়েন্ট ও পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। মহানগর ও জেলার নেতাদের গাড়ি পুরাতন রেলস্টেশন ও প্যারেড গ্রাউন্ড এবং গণমাধ্যমের গাড়ি নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে পার্কিংয়ের জন্য বলা হয়েছে।
জনসভার আগেরদিন শনিবার দিনভর প্রচার-প্রচারণায় মুখর চট্টগ্রাম। পিকআপে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে, সিএনজি অটোরিকশা-রিকশায় মাইক বেঁধে জনসভার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শেষদিনে স্লোগান উঠছে শুধু ‘নৌকা, নৌকা’। সিআরবির ছায়াঘেরা পিচঢালা পথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আঁকা আলপনা উৎসবে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) রাত জেগে শিক্ষার্থীরা সিআরবির পথকে রাঙিয়ে দেন। লিখে দেন- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন, আলপনায় স্বাগতম’।
শনিবার দুপুরে জনসভাস্থল পরিদর্শনে যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ কেন্দ্রীয় আরও কয়েকজন নেতা।
পলোগ্রাউন্ডের প্রবেশমুখে জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনসভায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হবে। পলোগ্রাউন্ড ময়দান ছাপিয়ে এই জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা স্মরণকালের ঐতিহাসিক জনসভা হবে।’
মাহবুব উল আলম হানিফ জানান, সকাল ৮টায় সভাস্থলের গেইট খোলা হবে। দুপুর আড়াইটার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলে আসবেন এবং তিনটার মধ্যেই বক্তব্য শুরু করবেন।
এর আগে শনিবার সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে জনসভাস্থল পরিদর্শনে যান দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এসময় সাংবাদিকদের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে চট্টগ্রামে ব্যাপক সাড়া জেগেছে, মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, এবার মাঠের তুলনায় আট-দশগুণ বেশি মানুষ মাঠের বাইরে থাকতে হবে।’
সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘জনসভার সব প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। চট্টলবাসী অধীর আগ্রহে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছেন। এবারের জনসভা চট্টগ্রামের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা জনসভা হবে বলে আমরা আশা করছি।’
সারাবাংলা/আরডি/ইআ