ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে ধীরগতি, খরচ বাড়ছে ১৪২ কোটি টাকা
৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:২০
ঢাকা: ফের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ১৪২ কোটি ২০ লাখ ৮১ হাজার টাকা। অর্থাৎ মূল ব্যয়ের তুলনায় ৭.০৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে ১ বছর ৬ মাস বাড়ছে মেয়াদও। এজন্য ‘ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প’ দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
এদিকে শুরু থেকেই প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীরগতি। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৬ বছরে প্রকল্পটিতে খরচ ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ৭০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৪.৯২ শতাংশ, অথচ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যেই।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২ হাজার ২৯ কোটি ২৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ৭১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এখন ১৪২ কোটি ২০ লাখ ৮১ হাজার টাকা বাড়িয় মোট ব্যয় প্রস্তাব ২ হাজার ১৭১ কোটি ৪৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। যখন এটি অনুমোদন দেওয়া হয় তখন বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত।
এরপর ব্যয় বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত একবছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় এবার দ্বিতীয় সংশোধনীতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পের সংশোধনী আসছে। আমরা চেষ্টা করি ভালোভাবে যাচাইবাছাই করতে। বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে এবং একান্ত প্রয়োজন হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশন সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করেছে। তবে প্রকল্পের বারবার সংশোধনী কোনভাবেই কাম্য নয়।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০৪১ সাল নাগাদ দেশের সম্ভাব্য বিদ্যুৎ চাহিদা (৫০ হাজার ৯৭৯ মেগাওযাট) পূরণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার শক্তিশালী অবকাঠামো উন্নযনের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ১৯৮৯ সালে স্থাপিত ঘোড়াশাল চতুর্থ স্টিম টারবাইন ইউনিটকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে রি-পাওয়ারিং করে প্ল্যান্টটিকে ৪০৩.৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ২০১৬ সালের ৮ মার্চ একনেক সভায় প্রকল্পটির মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন করেন।
বর্তমানে বাস্তব অবস্থার জন্য প্রকল্পের কার্যপরিধিতে দু’টি নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি, কয়েকটি অঙ্গের প্রাক্কলিত ব্যয় সমন্বয় এবং প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর ৬ মাস বৃদ্ধি করে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে প্রকল্পের কিছু অঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্পের রাজস্ব খাতের বিভিন্ন অঙ্গে (অফিসারের বেতন, কর্মচারীদের বেতন, ভাতা, জ্বালানি ইত্যাদি), অফিস ফার্নিচার ও খুচরা যন্ত্রাংশ, কাস্টমস ডিউটি, কর ও ট্যাক্স খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
অপরদিকে, পূর্তকাজ (অনাবাসিক), পরামর্শক সেবা, আইডিসি, ফিজিক্রার কন্টিনজেন্সি এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি অঙ্গে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। এসব ব্যয় সমন্বয় করে উন্নযন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে বিদ্যমান স্টিম টারবাইনের সংশোধন কাজের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং ওভারহোলিং কাজ এবং গ্যাস টারবাইনের এলটিএসএ (লং টার্ম সার্ভিস এগ্রিমেন্ট) এর আওতায় খুচরা যন্ত্রাংশ ও কনজিউমেবলস সরবরাহ এই দু’টি নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্টিম টারবাইনের সংশোধন কাজের যন্ত্রাংশ কেনা, সংশোধন কাজ শেষ করা, কম্বাইন্ড সাইকেলের প্রি-কমিশনিং ও কমিশনিং এবং পারফরমেন্স গ্যারান্টি টেস্ট সম্পন্ন করা ইত্যাদি কারণেও দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ২১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত হবে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে মানসম্মত, নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন: ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বৃত্ত ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব
সারাবাংলা/জেজে/এমও