ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় নাব্য সংকট, বিপদে দুর্গম চরের বাসিন্দারা
৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৪৭
গাইবান্ধা: ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর নাব্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দু’নদের বুক জুড়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর ও ডুবোচর। নদের বাঁকে ডুবন্ত চরে আটকে যাচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আটকে যাওয়া নৌকা চর থেকে ছাড়াতেও সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। প্রতিবছর খনন না করার কারণে নদ-নদীতে এই নাব্যতা-সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে গাইবান্ধার দুর্গম চরের বাসিন্দাদের।
জানা যায়, দুর্গম চরের নৌ যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার জন্য বালাসী-বাহাদুরাবাদঘাট রুটে চলতি বছরের ৯ মার্চ চালু হয়েছিল যাত্রীবাহী লঞ্চ। কিন্তু নাব্য সংকটের কারণে এখন জেগে ওঠা চরে আটকে আছে এমভি মহবত নামের সেই লঞ্চটি। অন্য লঞ্চ দু’টি নাব্য সংকটের আগেই বাহাদুরাবাদ ঘাট এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করছে।
গাইবান্ধার ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর ও ফুলছড়ি ইউনিয়ন চরাঞ্চলের মানুষজন আসে মেইনল্যান্ডের হাটবাজার, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অন্য ৪ ইউনিয়নের মধ্যে গজারিয়া, উদাখালী, উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়ার এক-চুতর্থাংশ চরাঞ্চল। এই নৌপথ বছরে আট মাস থাকে পানির নিচে, আর বাকি চার মাস দিগন্তবিস্তৃত চরাঞ্চলের সর্বত্র দেখা যায় ধু-ধু বালি। ফাল্গুনের রোদে উত্তপ্ত বালু যেন চরের পথে কাঁটা হয়ে ছড়ানো।
ফুলছড়ি উপজেলার আড়াই লাখের মতো মানুষের মধ্যে ৮৫ হাজারের কাছাকাছি বসবাস করেন চরাঞ্চলে। এখানকার ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৯৮ হাজার। প্রশাসনিকভাবে ফুলছড়ি উপজেলাভুক্ত হলেও উপজেলা সদর থেকে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ওই ইউনিয়নের লোকজন প্রশাসনিক প্রয়োজন ছাড়া সব কাজই করতে যান জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে। ফজলুপুরের লোকজন নির্ভরশীল গাইবান্ধা সদরের প্রতি। শুকনো মৌসুমে শুধু ফুলছড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষই আসে ফুলছড়ির হাটে।
নভেম্বর থেকে নদীতে পানি না থাকায় হেঁটে চলতে হয়। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। আগে কখনোই এই মৌসুমে এভাবে এ নদের পানি শুকিয়ে যায়নি। এর ফলে নৌ চলাচল রুটগুলোতে জমেছে বড় ধরনের বালুর স্তর। কার্তিক মাসেই ব্রহ্মপুত্র আর যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। বিশাল এলাকাজুড়ে চর দেখে মনেই হয় না এখানে এক সময় উত্তাল ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদের কালাসোনা টার্নিং পয়েন্ট নৌ চ্যানেল ভরাট হয়ে পড়েছে।
উপজেলার গজারিয়া তিস্তামুখ ঘেয়াঘাট ইজাদার শাহ আলম বলেন, ‘নদীর নাব্য সংকটের কারণে মূল ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পূর্ব পাশে নদীর ভেতরে বর্তমানে নৌকা চালু করতে হয়েছে।’
ফজলুপুর ইউনিয়ন পষিদের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামানিক বলেন, ‘ফজলুপুর, ফুলছড়ি, গজারিয়া ও এরেন্ডাবাড়ির আন্তঃইউনিয়ন রুটের প্রায় ১০টি বন্ধ হয়ে গেছে।’
লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ৯ মার্চ প্রাথমিক ভাবে বালাসীঘাট থেকে লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হলেও বর্তমানে নাব্যতা সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। চরে আটকে থাকা এমভি মহবত লঞ্চটি এভাবে পড়ে থাকলে জম ধরে নষ্ট হয়ে যাবে। নদীতে পানি না আসা পর্যন্ত লঞ্চটিকে ওখান থেকে সরানো সম্ভব হবে না।’
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান বলেন, ‘গাইবান্ধা থেকে যে ব্রহ্মপুত্র নদী প্রবাহিত হচ্ছে, এই নদীর প্রস্ততা প্রায় ১২ থেকে স্থান ভেদে ১৬ কিলোমিটার। এ জেলায় যে নৌরুটটি আছে, তা বিআইডব্লিউটিএর ত্বত্তাবধানে পরিচালিত হয়। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ড্রেজিং এবং নাব্য সংকট সমাধানে কোনো কার্যক্রম নেই।’
সারাবাংলা/এমও