বজ্র মেঘের সারির তলে বাংলাদেশ
৩০ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:২১ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:২৫
।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর ।।
ঢাকা: ঘনঘন ঝড় আর বজ্রপাত নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু রোববার (২৯ এপ্রিল) সারাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। সোমবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত বজ্রপাতে ছয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বজ্র মেঘের সারির তলে আছে বাংলাদেশ। এই ঝড় খুব সহজেই কমবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বি এম রাব্বী হোসেইন সারাবাংলাকে জানান, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার কারণেই হঠাৎ করেই বেড়েছে ঝড় আর বজ্রপাত।
তিনি বলেন, গরম যত বেশি হবে, বাষ্প তত বাড়বে। বাষ্পগুলো উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয়। পরপর তৈরি হওয়া এই মেঘগুলো নিজেদের মধ্যে বজ্র তৈরি করে এবং ঝড় হয়।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান জানান কীভাবে ঝড়গুলো তৈরি হচ্ছে।
“আমাদের দেশের উপর যে ঝড়গুলো সাধারণত বৈশাখ মৌসুমে হয় তার কারণ আন্দামান সাগর ও তার নিকটবর্তী এলাকায় থাকা লঘু চাপ। এই লঘু চাপের কারণে ফাঁকা স্থান তৈরি হয়। তখন আশপাশের আর্দ্র বায়ু দ্রুত সেই ফাঁকা স্থানে চলে আসে, তৈরি হয় মেঘ।
এই মেঘগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ হচ্ছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো যেমন রংপুর, দিনাজপুর হয়ে তা দেশের মধ্যভাগে আসে। মধ্যভাগে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ পেরিয়ে দক্ষিণভাগ যেমন মাদারীপুর বরিশাল হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে শেষ হয়।এই ঝড়গুলোর স্বাভাবিক গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকে।”
এ বছর ঝড় বৃষ্টি বাড়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামানও চিহ্নিত করেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে। তিনি বলেন, এবারের ঝড়গুলো কোনোটিই প্রতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের চেয়ে খুব বেশি ছিল না। তবে প্রায় প্রতিদিনই ঝড় হচ্ছে। এর কারণ, অধিক তাপে মেঘ তৈরি বেশি হচ্ছে। এরকম অনেকগুলো বজ্র মেঘ পর পর জমে আছে। যারা তাদের স্বাভাবিক গতিপথ পার হচ্ছে। ফলে বজ্র বৃষ্টি শেষই হচ্ছে না।
এই মেঘের ফলে দেশের কিছু অংশে শিলা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানান এ আবহাওয়াবিদ।
এদিকে বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩০ জন, শুধু গতকালই মারা গেছে ১৪ জন। আজ (৩০ এপ্রিল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) ৬ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এমন দুর্যোগপূর্ণ দিনে বিশেষ কিছু সতর্কতা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভাগটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এসব সতর্কতাকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
দুর্যোগ মৌসুমের আগের সতর্কতায় বলা হয়েছে, ঝড়ের মৌসুম শুরুর আগেই টিনের ঘরবাড়ি মেরামত করতে হবে, মরা ডালপালা ও রোগ আক্রান্ত গাছ অপসারণ করতে হবে। বাড়ির আশপাশে অনেক গাছ লাগাতে হবে যেন ঝড়ো হাওয়া বাড়ির কোনো ক্ষতি না করতে পারে।
বিদ্যুৎ চমকানোর কতক্ষণ পরে শব্দ শোনা যায় তা হিসেব করে বজ্রমেঘটি কত দূরে আছে তা নিরূপণ করা যায়। যদি বিদ্যুৎ মেঘটি ১০ কিলোমিটার দূরেও থাকে তাহলেও কাছাকাছি কোথাও আশ্রয় নেওয়া সম্ভব। কারণ পরের বজ্রটি কারও ওপর আসতে পারে। খোলা জায়গায় ও বিচ্ছিন্ন এলাকায় বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে, বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় না থাকার পরামর্শ দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।
তবে ঘরের বাইরে খোলা জায়গায় থাকতে হলে গুটিসুটি হয়ে মাটির কাছে বসে থাকতে হবে, কিন্তু মাটিতে শোয়া যাবে না। গাছে ঠিক নিচে আশ্রয় না নিয়ে চার মিটার দূরে বসে থাকতে হবে। গাছের ঠিক নিচে আর গাছ থেকে অনেকটা দূরে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গাড়ির ভেতর বা ঘরের ভেতরে বজ্রপাত থেকে নিরাপদে থাকা যাবে। বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতির সংযোগ খুলে রাখতে হবে।
নৌকায় থাকলে নৌকার মাঝে গুটিসুটি মেরে বসে থাকতে হবে। মাছ ধরা নৌকা হলে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ঝড় শুরুর আগেই জলাশয় ত্যাগ করা যায়।
বৈদ্যুতিক তারের থেকে দূরে থাকতে হবে যেন তার ছিঁড়ে মাথায় না পরে।
বাড়িতে বজ্র নিরোধক দণ্ড ব্যবহার করতে হবে। ঘরের বাইরে ছাঁদে এমনকি বারান্দাও নিরাপদ নয়।
শিলা বৃষ্টিতেও ছাউনির নিচে অবস্থান করতে হবে, পড়ন্ত শিলার গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় হয় ৬০ কিলোমিটার। এর আঘাতেও ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়াও এমন অতি বর্ষণে পাহাড় ধস, গাছ উপড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। এগুলো থেকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সারাবাংলা/এমএ/জেডএফ
আরও পড়ুন..
নারায়ণগঞ্জে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৩