খুনির দল যেন ক্ষমতায় না আসে, ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান শেখ হাসিনার
৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:১৬
ঢাকা: চট্টগ্রামবাসীকে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নৌকায় ভোট ওয়াদা করিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই বাংলার মাটিতে আবার যেন ওই যুদ্ধাপরাধী খুনির দল ক্ষমতার এসে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আমরা দেব না। কারণ জামায়াত-বিএনপি খুনির দল, যুদ্ধাপরাধীর দল, জাতির পিতাকে হত্যাকারী মদদদানকারীর দল, এমনকি আমাকেও বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।
স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় জনসভা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তার আগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন শিল্পীরা। জনসভার প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ৩টার পরে মঞ্চের দিকে আসেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে দোয়া মোনাজাতে অংশ নিয়ে মঞ্চে আসনগ্রহণ করেন। জনসভা মঞ্চে উঠে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তিনি। প্রায় ১১ বছর পর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় উপস্থিত থাকলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগরীতে উৎসবমুখরর আমেজের সৃষ্টি হয়। পলোগ্রাউন্ড মাঠ থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়কে জনতার বিশাল উপস্থিতি হয়। পলোগ্রাউন্ড মাঠ জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসভা ঘিরে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করে।
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২২-এ যোগদান করেন এবং সেখানে বক্তব্য রাখেন। সেখান থেকে দুপুরে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নামেন। স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় যোগ দেন।
জনসভায় ভাষণের শুরুতেই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুশল নেতাকর্মীসহ জনতার উদ্দেশ্যে কুশল বিনিমিয় করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অনরা কেএন আছন, গম আছন নি?
১৫ আগস্ট বিদেশে থাকার কারণে ছোট বোন রেহানাসহ নিজের বেঁচে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ছয়টা বছর দেশে আসতে পারিনি। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। আমাকে দেশে আসতে দেয়নি। রেহানার পাসপোর্টটা রিনিউ করতে দেয়নি। বরং খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। বিচার করা যাবে না, সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি এনেছিল দেশে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি, জনগণের প্রতি। আর শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে।’
এরপর ছয় বছর পর অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা একবার ভেবে দেখেন? যেখানে যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়। আবার বাবা-মায়ের হত্যাকারীরা ক্ষমতায়। আমি সেই দেশে সব কিছু ত্যাগ করে ফিরে এসেছিলাম কেন? এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য। যে মানুষের জন্য আমার বাবা সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমার মা জীবনে কিচ্ছু চাননি। তার জীবনটাও তিনি উৎসর্গ করেছেন, এই দেশের মানুষের জন্য।’
‘আজকে বাবা মা ভাই সব হারিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার মানুষের জন্য। কেন? যেন এই দেশের মানুষ পেটভরে ভাত খেতে পারে। তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা হবে, শিক্ষা হবে উন্নত জীবন পাবে; বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ; সেই বিজয়ী দেশ হিসাবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো, আমরা যেন সেইভাবে বাংলাদেশকে সেইভাবে গড়তে পারি। আপনাদের দোয়ায় আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে নিজের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা চাই; এই বাংলার মাটিতে আবার যেন ওই যুদ্ধাপরাধী খুনির দল ক্ষমতার এসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আমরা দেব না। কারণ জামায়াত-বিএনপি খুনির দল, যুদ্ধাপরাধীর দল। জাতির পিতাকে হত্যাকারী মদদদানকারীর দল।এমনকি আমাকেও বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। কাজেই এই মানুষের রক্ত চুষে খেতে না পারে। আর যেন দেশে আসতে না পারে।’
আগামী নির্বাচনেও টানা মেয়াদে নৌকায় ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাওয়ার আগে একটি ওয়াদা চাই। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আগামীতে আপনারা ভোট দেবেন নৌকা মার্কায়, হাত তুলে বলেন।’
জনসভাস্থলে উপস্থিত জনতার প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাত নেড়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক দিন পর আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হলো। আপনারা যারা এখানে মাঠে আছেন, আসার সময় দেখতে পেলাম, বাইরে যারা আছেন; হয়ত চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছি না। যত দূরেই থাকেন আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে আমার অন্তরে। বাবা-মা ভাই হারিয়ে আপেনাদের কাছেই ফিরে পেতে চাই আমার বাবার ভালবাসা আমার মায়ের ভালোবাসা ভাইয়ের ভালবাসা, আপনারাই আমার পরিবার। আপনাদের কাছেই আমার একমাত্র আশ্রয়। কাজেই আজকে আপনাদের কাছে এসে অত্যন্ত আনন্দিত।’
চট্টগ্রামবাসীর প্রতি ভালবাসার আবেগ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদায়ের আগে বলে যেতে চাই, নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেওয়ার কিছু নাই। আছে শুধু ভালবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’
এরপর জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বিদায়ী স্লোগান দিয়ে আবার দেখা হবে সেই প্রত্যাশায় বক্তব্য শেষ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম নগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভার সভাপতিত্ব করছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সভার শুরুতে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করার জন্য নাম প্রস্তাব করেন। তা সমর্থন করেন উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম। শুরুতে প্রয়াত নেতাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
যৌথভাবে জনসভা সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এনআর/একে