বিএনপি চায়, নাগরদোলায় করে কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে
৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৩১
ঢাকা: বিএনপির দুইটা গুণ, ভোট চুরি আর মানুষ খুন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইলেকশন হলে জনগণ ওই খুনিদের ভোট দেবে না। তাই তারা ইলেকশন চায় না। তারা চায় এমন কিছু আসুক যারা একেবারে নাগরে (নাগরদোলা) করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে বা পালকিতে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে বিএনপিকে। এটিই তারা আশা করে। তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় জনসভা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তার আগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন শিল্পীরা। জনসভার প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ৩টার পরে মঞ্চের দিকে আসেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর দোয়া মোনাজাতে শেষে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। জনসভা মঞ্চে উঠে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। প্রায় ১১ বছর পর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় উপস্থিত থাকলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগরীতে উৎসবমুখরর আমেজের সৃষ্টি হয়। পলোগ্রাউন্ড মাঠ থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়কে জনতার বিশাল উপস্থিতি হয়। পলোগ্রাউন্ড মাঠ জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসভা ঘিরে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করে।
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২২-এ যোগদান করেন এবং সেখানে বক্তব্য রাখেন। সেখান থেকে দুপুরে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নামেন। স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় যোগ দেন
চট্টগ্রামের উন্নয়নে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৬টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন করি। মানুষের কল্যাণ দেখি। আর বিএনপি মানুষ খুন করে। মিথ্যা কথা বলে আর মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এটিই হচ্ছে তাদের কাজ। এই কাজেই তারা করে। তারা গ্রেনেড মারতে পারে, বোমা মারতে পারে।’
চট্টগ্রামে তারা বারবার গুলি চালিয়েছে, গ্রেনেড মারিয়েছে। এরপরও লালদিঘি ময়দানে মিটিং করতে গেছি, সেখানেও তারা গুলি চালিয়েছে। শুধু এখানেই সারা বাংলাদেশ জুড়ে ৬৩টি জেলায় পাঁচশটি জায়গায় বোমা হামলা করেছে বিএনপি। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস; এগুলো তারা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা মানুষের শান্তি চায় না।
ক্ষমতায় থেকে কী করেছে? দুই হাতে লুটপাট। জনগণের অর্থপাচার করেছে। নিজেরা অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে মারা যায়। ৪০দিন পর্যন্ত টেলিভিশনে শুনিয়েছিল, জিয়া কিচ্ছু তার পরিবারের জন্য রেখে যায়নি। একটি ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া নাকি কিছু ছিল না। তাই আমার প্রশ্ন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসতে না আসতেই হাওয়া ভবন খুলে তার ছেলে চাঁদাবাজি আর অর্থ সংগ্রহ এবং অর্থ পাচার করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে; এগুলো কোথা থেকে এলো? ভাঙ্গা স্যুটকেসটা তো আর জাদুর বাক্স হয়ে যায়নি। ওটা কি জাদুর বাক্স হয়ে গিয়েছিল? আর ওই ছেঁড়া গেঞ্জি হয়েছিল ফ্রেঞ্চ শিফন।
‘আওয়ামী লীগ জনগেণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা এনেছে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে বলে জানান তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে চট্টগ্রামের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্রসহ সারাদেশে বিভিন্ন উন্নয়নের তুলে ধরেন। পাশাপাশি অর্থ আত্মসাতের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হওয়াসহ তার ছেলেদের দুর্নীতি লুটপাটের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার এক ছেলে মারা গেছে। যে অর্থপাচার করেছিল। সিঙ্গাপুর থেকে সেই অর্থ কিছু আমরা উদ্ধার করে আনতে পেরেছি। আরেকজনকে কুলাঙ্গার বানিয়ে রেখে গেছে জিয়াউর রহমান, সে এখন লন্ডনে বসে আছে। সে কেন লন্ডনে? ২০০৭ সালে তখনকার কেয়ারটেকার সরকারের কাছে আরও কোনদিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়েছিল। আর এখন সেখানে রাজার হালে থাকে। আর দেশের ভেতরে যত বোমাবাজি যত খুনখারাবি, যত রকমের নাশকতার কাজ; সেগুলো পরিচালনা করে।’
সরকারিবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪’তে বিএনপি ইলেকশনে যাবে না বলে ২০১৩ সাল থেকে শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। চারদিকে শুধু অগ্নিসন্ত্রাস। অগ্নিসন্ত্রাসে আহত হয়েছে ৫শ মানুষ। মানুষ নিহত হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যাদের মধ্যে এতটুকু মনুষ্যত্ব আছে তারা কি এভাবে হত্যা করতে পারে? এটিই তাদের আন্দোলন? তাদের আন্দোলন মানুষ খুন। তাই বিএনপির দুইটা গুণ আছে। ভোট চুরি আর মানুষ খুন, ওইটা পারে। ইলেকশন হলে ওই খুনিদের ভোট দেবে না। তাই তারা ইলেকশন চায় না, চায় সরকার উৎখাত করে এমন কিছু আসুক যারা একেবারে নাগরে (নাগরদোলা) করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে বা পালকিতে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে বিএনপিকে; এটিই তারা আশা করে। তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না। এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’
বিএনপি সরকারের আমলে রিজার্ভ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। করোনাকালে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়াসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কেন দিয়েছি, কারণ জনগণের জন্য। কারণ জনগণের জন্য কাজ। জনগণের কথাই আমরা ভাবি। কাজেই আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আমরা সেটিই করে যাচ্ছি।’
খুনি দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে বিএনপির এখনও সম্পর্ক আছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ অগ্নিসন্ত্রাস করে যে সমস্ত মানুষকে হত্যা করেছে এবং আগুনে দগ্ধ। বহু পরিবার ধ্বংসের পথে; এর জবাব একদিন খালেদা জিয়া-তারেক জিয়াদের দিতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস করে কেন তারা মানুষ হত্যা করল। এর হিসাব জনগণে নেবে। এই হিসাব তাদেরকে দিতে হবে।’
মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না সেই অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম নগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভার সভাপতিত্ব করছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সভার শুরুতে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করার জন্য নাম প্রস্তাব করেন। তা সমর্থন করেন উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম। শুরুতে প্রয়াত নেতাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
যৌথভাবে জনসভা সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এনআর/একে