সংকটে নিষ্ক্রিয় অনেকেই এখন শীর্ষ পদ পেতে সক্রিয়
৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৩৮
ঢাকা: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন ৬ ডিসেম্বর। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শীর্ষ পদ পেতে মরিয়া অনেকেই। তবে সংকটময় পরিস্থিতিতে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন বর্তমানে তাদের পাল্লাই ভারি বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে সংকটময় পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শীর্ষ পদের দায়িত্বে থাকা নেতারা বলছেন, পদ নিতে অনেকেই অনাগ্রহী থাকায় নির্বাচনের আগে অধিকাংশ হলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি। এখন যারা শীর্ষ পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন, তাদের অনেককেই সেই সংকটকালে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ছাত্রলীগের গত চার কমিটিতে শীর্ষ নেতৃত্ব এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই সংস্কৃতি বিবেচনায় রেখে আগামী ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ৩০তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এবারও এই প্রতিষ্ঠান থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে— এমনটাই প্রত্যাশা অনেকের। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় থাকা প্রার্থীদের সিংহভাগই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আংশিক কমিটি তথা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবল সাতটি হলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারে ছাত্রলীগ। হলগুলো হলো— সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, কবি জসীম উদ্দীন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, অমর একুশে হল, স্যার এ এফ রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও জগন্নাথ হল। এ ছাড়া মৌখিকভাবে কমিটি করেছিলো স্যার এ এফ রহমান হল।
সে সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা হলগুলোর কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রলীগের কমিটি করতে জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়ে ১৩টি। সূর্যসেন হলে জমা পড়েছিল ১০টির কম। এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয় ২৭ জন। এভাবে অন্যান্য হলগুলোতেও প্রায় একই চিত্র দেখা দেয়।
২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর গঠিত কবি জসীমউদ্দিন হলের কমিটিতে পদে থাকা নেতাদের মধ্যে প্রার্থিতার দৌড়ে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু এবং উপ-আইন সম্পাদক শাহেদ খান। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর গঠিত ওই কমিটিতে এরা ছিলেন যথাক্রমে সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সভাপতি এবং প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে।
২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি গঠিত হয় ৫১ সদস্য বিশিষ্ট সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটি। ওই কমিটিতে পদে থাকা নেতাদের মধ্যে প্রার্থিতার দৌড়ে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, আইন সম্পাদক ফুয়াদ হাসান শাহাদাত এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদি হাসান তাপস। ওই কমিটিতে এদের তিনজনই ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে।
২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর গঠিত ১২১ সদস্যের জগন্নাথ হল শাখা কমিটির নেতাদের মধ্যে এবারের সম্মেলনকে ঘিরে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি উৎপল বিশ্বাস, উপ-সাহিত্য সম্পাদক জয়দ্বীপ দত্ত (জয়জিৎ)। ওই কমিটিতে এদের দুজন যথাক্রমে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর গঠিত হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের মধ্যে সামনের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান। ওই কমিটিতে সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গঠিত স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যের কমিটিতে থাকা নেতাদের মধ্যে প্রার্থিতার দৌড়ে আলোচনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এরা দুজন সেসময় যথাক্রমে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ক্রীড়া সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন।
২০১৩ সালের ৩১ জুলাই গঠিত অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে পদপ্রাপ্তদের মধ্যে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান উপ তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এহসান উল্লাহ পিয়াল। ওই কমিটিতে সহ-সম্পাদক ছিলেন তিনি।
দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা দিদার মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংগঠন যারা করতে চাইবে তারা থাকবেই। তবে এই পরিসীমার বাইরেও কিছু লোক আছে, যারা সুবিধা নিতে আসে। সবসময়ই থাকে। দুঃসময়কে এড়িয়ে চলতে চায়। তারা সুসময়ে সুবিধা লুফে নিতে চায়।’
দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ওমর শরীফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নাম বলব না, একটি হলের ক্ষেত্রে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ৩০টি সিভিও পাওয়া যায়নি। মেয়েদের হলগুলোতে তো অপেক্ষাকৃত জুনিয়র মেয়েকে নেতৃত্বে আনতে হয়েছে। সার্বিক অবস্থা এমনই ছিল।’
তিনি বলেন, ‘হলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যেতে চাননি, এমন অনেকেই পরবর্তী সময়ে হল প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়েছে— এমন ঘটনাও আছে। সে সময়ে পদ নিতে না চাওয়া অনেকেই এখন হয়তো প্রার্থী হিসেবেও আলোচনায় আছেন।’
এদিকে, দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শীর্ষ নেতৃত্বে আসার দৌড়ে আলোচনায় আছেন অনেকেই। এদের মধ্যে বরিশাল অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, উপ-কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয় এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান রহমান।
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সুজন এবং কর্ম সংস্থান সম্পাদক রনি মোহাম্মদ। উত্তরাঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সদস্য রাকিবুল হাসান রাকিব, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবুল হাসনাত হিমেল। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে উপ-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার উদয়, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক নেয়ামতউল্লাহ তপন ও সহ-সভাপতি সোহান খান।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, সহ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, সহ-সম্পাদক দিদারুল আলম।
বৃহত্তর খুলনা অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন এবং মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহীন। সিলেট অঞ্চল থেকে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান আলোচনায় আছেন।
সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম