Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ মাসেও স্কুল শিক্ষার্থী আহনাফকে খুঁজে পায়নি র‌্যাব-পুলিশ-ডিবি

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:৩০

ঢাকা: “আমি তো স্বপ্নেও ভাবিনি আমার বাবা হারিয়ে যাবে, কল্পনাও করিনি যে আর বুকের ধন ছেলেকে খুঁজে পাবো না, আমার মানিককে ফেরত চাই, মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে তবু কেন ফেরে না আমার বাপধন’— এই আহাজারি আঞ্জুমান আরা বেগম নামে এক মায়ের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ছেলেকে ফেরত পাননি তিনি।

রাজধানীর দারুসসালাম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ রহমান গত ৩১ আগস্ট বিকেলে বাসা থেকে চা খেতে বের হয়ে আর ফেরেননি। এরপর র‌্যাব-পুলিশ, এমনকি সিটিটিসির কাছে ধর্ণা দিয়েও সন্ধান আদরের সন্তান আহনাফকে খুঁজে পাননি মা।

পরিবার ও সহপাঠীদের অভিযোগ, দিনের আলোতে একজন স্কুল শিক্ষার্থী গায়েব হয়ে গেলো, কেউই তাকে খুঁজে বের করতে পারছে না। এটা কি হতে পারে? মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে কোনো সন্ধান পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একজন স্কুল শিক্ষার্থীর কি এমন শত্রুতা থাকতে পারে, কি এমন আক্রোশ থাকতে পারে আর রাষ্ট্রেরই বা কি এমন ক্ষতি করতে পারে যে তাকে নিখোঁজ হতে হলো।

পরিবারের দাবি, নিখোঁজের বেশ কিছুদিন আগে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বাসা নেওয়ার জন্য বাবা-মায়ের কাছে বলেছিল আনহাফ। তার মধ্যে কি যেন একটা ভয় কাজ করতো। হয়তো কেউ তাকে ডিস্টার্ব করছিল।

আহনাফের বাবা আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজের পর থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, সিটিটিসি, পিবিআই এমনকি র‌্যাবেও গিয়েছি। তার কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। পুলিশ হাল ছেড়ে দিয়েছে। র‌্যাব চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে তারা।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা ছেলেকে ফেরত চাই। যেকোনো অবস্থাতেই আমাদের ছেলেকে জীবিত ফেরত চাই। কোনো অঘটন ঘটে থাকলে সেটাও জানতে চাই। এত মানুষের মরদেহ মেলে, আমাদের ছেলের এমন কিছু ঘটলে সেটিও দেখতে চাই।’

আহনাফ নিখোঁজের ঘটনায় দারুস সালাম থানায় একটি জিডি হলে সন্দেহভাজন হিসেবে তারই এক সহপাঠীকে আটক করে থানায় নেওয়া হলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানা যায়, দারুসসালাম থানাধীন গৈদারটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মায়ের কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে চা খেতে নামে আহনাফ। এর আগে, সে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিয়েছে। মাগরিবের আজানের আগে মায়ের কাছ থেকে ১০ টাকা চেয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘরে ফেরার কথা ছিল। এরপর আর সে ফিরে আসেনি।

মা আঞ্জুমান আরা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজের পর রাতেই থানায় যাই। পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নানা কথা শোনায়। ওসি বলে, আপনার ছেলে কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে কিনা? এলাকায় খোঁজ নেন কোনো মেয়ে পালিয়েছে কিনা? জঙ্গি কানেকশন আছে কিনা ইত্যাদি। রাতে কোনোভাবেই জিডি নিলো না বা ছেলেকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নিলো না। পরেরদিন আবার থানায় গেলাম। এরপর অনেক বলে কয়ে জিডিটা নিলো। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবু জাফর দিনের পর দিন সময়ক্ষেপণ করতে লাগল। ১৫ দিন পর তার সহপাঠী একজনকে আটক করে নিয়ে এল। কিন্তু কি এমন হলো, তাকে ছেড়ে দিল পুলিশ।’

ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশ কেন ধরেছিল জানতে চাইলে আহনাফের মা বলেন, ‘এলাকায় মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি অনেক দিন ধরে। মাদকের বিরুদ্ধেও কথা বলি। ওই সহপাঠী সিগারেট খায়, বিদ্যালয়ে যায় না, স্কুলের পোশাক পড়ে বখাটেপনা করে। এসব নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে বলি এবং শাসন করতে বলি। আহনাফ বলত, মা তুমি এসব বলাবলি বন্ধ করো। অন্যকে নিয়ে চিন্তা বাদ দাও। ওর বাবা ও মা ওকে মারধর করে। আমাকে সে হুমকি দেয়। সে বলে তোর মাকে এসব করতে নিষেধ কর। স্কুলে আমি ভালো রেজাল্ট করলেও ওর বাবা-মাকে বলবে না। কারণ ওকে তারা ধরে মারধর করে। তখন সে আমাকে নানাভাবে হুমকি দেয়।’

আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘ছেলের কথা শোনাই উচিত ছিল। আমার ছেলে শান্ত-ভদ্র ছিল। কোনো ঝুট ঝামেলায় থাকত না। আমাদের বাসা ছেড়ে অন্য এলাকায় বাসা নিতে বলেছিল সেটাও শুনিনি। আজ ছেলেকে হারাতে হলো। আমাদের কোনো শত্রু নেই। ওর বাবারও কেউ শত্রু নেই। আমরা খুব নিরীহভাবে বাস করি। একমাত্র ওই ছেলের বাবা-মাকেই একটু আধটু ছেলেকে শাসন করতে বলেছিলাম। পুলিশ কোনো ক্লু বের না করে তাকে ছেড়ে দিল।’

সবাই চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই আমার ছেলেকে পাচ্ছে না। তাহলে কী আমার ছেলেকে আর ফেরত পাবো না— প্রশ্ন করেন আর হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন আহনাফের মা।

আহনাফের বাবা ব্যবসা করেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বাস করছেন।

দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিডি করার পর আহনাফের সহপাঠী স্থানীয় আরেক শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমন কিছু না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে এসআই বলেন, ‘আমরা না হয় কিছু পারিনি, অন্য সংস্থাও তো কাজ করেছে এটা নিয়ে কই তারাও তো কিছু পেলো না। র‌্যাব, সিটিটিসি, ডিবি কাজ করছে কিছুই তো মিলছে না।’

জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আহনাফ রহমানের মোবাইল ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় চেক করে দেখা গেছে, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা তার পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছি।’

আহনাফের নিখোঁজের জিডি নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে। তবে ডিবির মিরপুর বিভাগের কর্মকর্তারা এ নিয়ে এখনও তেমন কিছু পাননি বলে জানান।

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

আহনাফ র‌্যাব-পুলিশ-ডিবি সিটিটিসি স্কুল শিক্ষার্থী স্কুল শিক্ষার্থী আহনাফ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর