Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘চট্টগ্রামের জনসভা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৫০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের জনসভা জনসমুদ্রে রূপান্তর হয়েছে। এটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বিপুল জনসমাগম দেখে আপ্লুত চট্টগ্রামের নেতারা বলেছেন, ‘জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চাই।’ তবে জনসভায় কী পরিমাণ জনসমাগম হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে সেটা বলেননি আওয়ামী লীগ নেতারা।

সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে জনসভা পরবর্তী উত্তর, দক্ষিণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে নেতারা একথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের জনসভা জনসমুদ্রে রূপান্তর হয়েছে। লোকে লোকারণ্য হয়েছে। এত বড় জনভা হবে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। জনসমাগম দেখে প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। সভা শেষে তিনি বারবার আমাদের সেটা বলেছেন। মানুষ চায়, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণের শক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে। সেই শক্তি যদি বিএনপির থাকে, তাহলে তারা নির্বাচন করুক। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি, তারা নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে সেটা তারা বাতিল করে দিয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী ২৬টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ যা আশা করেছে, তার প্রধানমন্ত্রী আরও বেশি করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে বিএনপি আমলে ৯ জন মন্ত্রী ছিল। তখন কত উন্নয়ন হয়েছে, সেইটার সাক্ষী আপনারা। দেশের মানুষ উন্নয়ন চায়, দেশের মানুষ বিএনপির সন্ত্রাস-বোমাবাজি এগুলা চায় না।’

উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘এই জনসভা যেমন আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল, তেমনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর জনসভা, ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রীর জনসভা। সভায় দলের সকল নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামুলক ছিল। তবে আমরা জানতে পেরেছি, দলের নেতাকর্মী ছাড়াও জনসভায় অনেক সাধারণ মানুষ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অংশ নিয়েছে। এতে এটাই প্রমাণ হয় যে, শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায় বাংলাদেশের মানুষ।’

নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। পলোগ্রাউন্ড মাঠের ভেতরে যত জমায়েত ছিল, তার চেয়ে বেশি জমায়েত ছিল বাইরে। জমায়েত পুরোটাই ছিল চট্টগ্রাম নগরী, উত্তর ও দক্ষিণ থেকে আসা। চট্টগ্রামের বাইরে থেকে একজন মানুষও জনসভায় আসেনি। আমার সাথে কুমিল্লা, ফেনী, রাঙামাটি থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমি তাদের মানা করে দিয়েছি।’

জনসভা দেখে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বশক্তি নিয়ে আমরা এ জনসভা করেছি। আমাদের শক্তির জানান দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে আসার সময় জনসভার পুরো চিত্র দেখেছেন। বক্তব্য দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী বাইনোকুলার দিয়ে দেখেছেন। জনসভা দেখে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়েছেন। যাবার আগে তিনি বিষয়টি একাধিকবার আমাদের কাছে উল্লেখ করেছেন।’

তবে সুনির্দিষ্টভাবে জমায়েতের সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানান আ জ ম নাছির উদ্দীন।

গত ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির সমাবেশে তিন লাখ জমায়েতের দাবির বিপরীতে আওয়ামী লীগের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো বিএনপির কাউন্টার কোনো প্রোগ্রাম করিনি। আমরা ভেতরে ছিলাম। ভেতরে যত লোক হয়েছে, বাইরে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়েছে। সুতরাং আমাদের পক্ষে কাউন্টিং করা সম্ভব নয়। একজন সাংবাদিক বলেছেন- ১০ লাখ। আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি তো বলব, ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সুতরাং এভাবে কাউন্টিং করা সম্ভব নয়।’

জনসভায় যোগ দিতে আসার পথে মিছিলে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া চন্দনাইশের আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।

সাংবাদিকদের তোপের মুখে আওয়ামী লীগ নেতারা:

সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা। অভিযোগ- জনসভায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ সাংবাদিককে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ঢাকা থেকে আসা সংবাদকর্মীরা ছাড়া চট্টগ্রামের অধিকাংশ সংবাদকর্মীকে জনসভাস্থলে বাইরে থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়েছে, যাতে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েন তারা। সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি দেয়া নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের হয়রানি করেছেন। এত বড় জনসভা হলেও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেননি, এমনকি ছিল না কোনো মুখপাত্রও।

সাংবাদিকদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জবাবে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অবগত ছিলাম না। তিন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আমরা যে ৬ জন দায়িত্বে আছি তারা যদি জানতাম, তাহলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করতাম। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসএসএফ’র স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বাইরে কথা বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। অনেক হাই রিস্ক নিয়ে আমরা প্রোগ্রামটা করেছি। আমাদের অনেক এমপি, মন্ত্রীও মঞ্চের কাছে আসতে পারেনি। তবুও আপনাদের বিষয়ে জানলে আমরা কিছু একটা করার চেষ্টা করতাম।’

এসময় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রেসক্লাবের সঙ্গে সার্বক্ষণিক, আমাদের চেয়েও বেশি যোগাযোগ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি আপনাদের সাথেও যোগাযোগ করেন এবং করেছেনও। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তো আপনাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে।’

মোছলেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, জনসভায় গিয়ে আমাদের সাংবাদিক ভাইদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেকেই ভেতরে ঢুকতে পারেননি। বিষয়টি আমরা জানতাম না। যদি জানতাম তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম।’

আ জ ম নাছির উদ্দীনও এসময় সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার শেখ আতাউর রহমান এবং সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ৪ ডিসেম্বর বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/আইসি/ এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর