‘বাংলাদেশে আসুন, দক্ষিণ এশিয়া ৩০০ কোটি মানুষের বাজার’
৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:২৭
ঢাকা: বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উত্তম জায়গা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তিনশো কোটি বেশি মানুষের বাজার দক্ষিণ এশিয়া। তাই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিনিয়োগের সবচেয়ে ভালো স্থান হতে পারে বাংলাদেশ। কারণ, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে বাংলাদেশে। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি ও পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে খুব স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যারা বিনিয়োগ করবেন তারা সেই সুযোগটা নিয়ে নিজেরা সমৃদ্ধশালী হবেন, দেশেরও উন্নতি হবে।’
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনের (জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। জাপানিজ ইকোনমিক জোনটি পুরোপুরি চালু হলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
বেজা এবং জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন যৌথভাবে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পথ চলা শুরু হয় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের মাধ্যমে। জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বাংলাদেশ সফরের সময় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। ২০১৬ সালে জাইকা বাংলাদেশে একটি জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ হাতে নেয় এবং একই বছর জাপান সরকার বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো করপোরেশনকে ডেভেলপার হিসাবে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করে। ২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে জাইকা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পক্ষে মত প্রদান করে। পরবর্তীতে যৌথ উদ্যোগে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ২০১৯ সালে বেজা ও সুমিতোমো করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি সই হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। ভারত, চীন, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরসহ আরও কয়েকটি দেশ সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আরও অনেক দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যারাই আসবে তাদের জন্য আলাদা একটা অঞ্চল তৈরি করা হবে, তারা যেভাবে চান সেভাবে করে দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। কাজেই সেই সুবিধাগুলো তারা ভোগ করতে পারবেন। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। রেল যোগাযোগও উন্নত করছি। ড্রেজিং করে নদীপথের উন্নয়ন করে দিচ্ছি। এই নদীপথে সবচেয়ে অল্প খরচে মালামাল পরিবহন করা যায়, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করে দিচ্ছি। বাংলাদেশের সঙ্গে সব অঞ্চলের একটা সংযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছি।’
বাংলাদেশ এখন সবথেকে বিনিয়োগের জন্য চমৎকার একটা পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই বিনিয়োগিকারীদের বাংলাদেশ আসার আহ্বানা জানাচ্ছি। তারা আসছেন, বিনিয়োগ করার আগ্রহও প্রকাশ করছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।’
তিনি বলেন, আমাদের তরুণ সমাজ যেন বিনিয়োগ করতে পারে তার জন্য বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। যেমন- স্টার্টআপ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। ইয়াং বাংলা থেকে আমাদের তরুণ-যুব সমাজকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তাদের জন্য স্বল্প সুদের ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যাতে শুধু চাকরির পিছনে না ঘুরে নিজেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, যেন নিজেরাই আরও অনেক লোককে চাকরি দিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবথেকে বড় কথা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান। বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটা সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। তার থেকে বড় কথা হলো- দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া সবথেকে ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা এবং আমরা আমাদের নিজেদের দেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছি। ফলে আমাদের দেশেও একটা মার্কেট তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বা যোগাযোগের ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছি। তাদের সঙ্গে আমাদের একটা চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই সেই অঞ্চলটার যে বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে, সেটাও কিন্তু একটা বড় বাজার।’
কাজেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে আমাদের সমুদ্র পথ, আকাশ পথ ও রেলপথ ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া রফাতানি করতে পারবে এবং একইসঙ্গে পণ্য পরিবহনে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তিনশো কোটি বেশি মানুষের বাজার দক্ষিণ এশিয়া। তাই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিনিয়োগের সবচেয়ে ভালো স্থান হতে পারে বাংলাদেশ। কারণ, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে বাংলাদেশে। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি ও পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে খুব স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যারা বিনিয়োগ করবেন তারা সেই সুযোগটা নিয়ে নিজেরা সমৃদ্ধশালী হবেন, দেশেরও উন্নতি হবে।’
একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের দিকে বিশেষ নজর দিয়ে সরকার কাজ করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে জাপানের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য দেশের জনগণের পক্ষ থেকে এবং তার সরকারের পক্ষ জাপান সরকারের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস