সোনার মানুষ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেবে ছাত্রলীগ: শেখ হাসিনা
৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩৩
ঢাকা: ছাত্রলীগ এদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত, আগামী দিনেও তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূমিকা রাখবে আশাবাদ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। আমি আশা করি, আমাদের ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েরাই সেই সোনার মানুষ যারা এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা সেইভাবে গড়ে উঠবে যেন এ দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে। সেইভাবে তাদের জনমত সৃষ্টি করতে হবে।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি সকাল সাড়ে ১১টায় বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে মঞ্চে প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন।
দীর্ঘ চার বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন। সংগঠনের শীর্ষ দুই পদে নেতা হওয়ার দৌড়ে প্রার্থী রয়েছেন তিন শতাধিক। সম্মেলন ঘিরে নানা রঙের পোস্টার-ব্যানারে সেজেছে গোটা রাজধানী। চলতি মাসে যে কোনো সময়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির। সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনায় শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে।
করোনা মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের ছাত্রলীগ হবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে ক্ষমতাসীনদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে ছিল এমন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হবে বলে মনে করছেন পদপ্রত্যাশীরা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলর ডেলিগেট, কর্মী-সমর্থকসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে সম্মেলন পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচায। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি। যেহেতু করোনাভাইরাস দেখা দিলো, বিশ্বব্যাপী মন্দা। এরপর দেখা দিল ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ । সারাবিশ্বের দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। আমরা দুইটা বছর বেশি সময় নিলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের কথা বলি। এই সংগঠনটি সবসময় গণমানুষের পাশে থাকে। আমি ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। কোভিড-১৯ যখন বাবা মা আত্মীয় স্বজন করোনাভাইরাসের মৃত্যুবরণ করলে লাশ ফেলে চলে যায় বা আক্রান্ত হলে ফেলে দেয়, আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেরো কিন্তু সেই সময় তাদের পাশে ছিল। শুধু ছাত্রলীগ না সেই সঙ্গে আমাদের দলের সব নেতাকর্মীরা পুলিশ বাহিনী সশস্ত্র বাহিনী তো ছিল কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র ছাত্রলীগই করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
করোনাভাইরাসের সময় ছাত্রলীগের মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটিই হচ্ছে মানবতার জন্য কাজ করা। কাজেই ছাত্রলীগ জাতির পিতার হাতের সংগঠন। কাজেই ঠিক তারা তখন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
এ ছাড়া বন্যাসহ নানা সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যারা এদেশের স্বাধীনতাই চায়নি। যারা স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে ঘর করে এবং তাদেরকে ক্ষমতায় বসায় বা তাদেরকে নিয়ে দল করে; তারাও তো এদেশের উন্নয়নটা কখনো মেনে নেবে না। চোখেও দেখে না। বাংলাদেশে নাকি কিছুই হয়নি, বাংলাদেশ নাকি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর শেষ হয়ে কারা যাচ্ছে? সেটাই হল প্রশ্ন, যে বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি মাত্র ৪৩/৪৫ভাগ স্বাক্ষরতার হার। আমরা ক্ষমতায় এসে ৬৫ ভাগে উন্নীত করি। মানুষ সামনের দিকে এগোয়। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশ পেছনে যায়। ওই যে বলে না, ভূতের পা পেছন দিকে। ওরা বোধহয় ভূতের রূপ নিয়েই আমাদের দেশে আসে।’
শিক্ষা ছাড়া কোনো দেশ কোনো উন্নতি করতে পারে না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যে যাই করুক না কেন লেখাপড়াটা করতে হবে এবং লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা স্বাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি। প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজকে ভালোভাবে চলার সুযোগ পেয়েছে। শুধু তাই না ২ কোটি ৫৩ লাখ ছেলেমেয়েকে বৃত্তি উপবৃত্তি দিচ্ছে। উচ্চ শিক্ষায় জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড করে তার মাধ্যমে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই তো দেশের উন্নয়ন। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপির আমলে বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯’এ এসে আমরা পেলাম ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও একই অবস্থা। আজকে আমরা সেখানে ৬ লাখ ৭৮হাজার ৬৪ কেটি টাকার বাজেট দিয়েছি।’
‘এই বাজেট অর্থনৈতিকভাবে যদি শক্তিশালী না হয়, অর্থনৈতিকভোবে যদি অগ্রগতি না হয় তাহলে ওই ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট আমরা ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট কীভাবে দিলাম। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্ত ভীতের ওপর দাঁড়িয়েছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। আর সেটি আমাদের গৃহীত প্রতিটি প্রোগ্রাম, কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে এটি করতে পেরেছি।’
আমাদের যারা যুবসমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ। আমি ২০৪১’এ উন্নত বাংলাদেশ করবো, তো আমার ৪১’র সৈনিক কারা হবে? এই আজকের যুব সমাজ তারা এবং প্রজন্মের প্রজন্ম। কাজেই আমরা তাদেরকে দক্ষ করে গদড়ে তুলতে চাই। কাজেই প্রযুক্ত জ্ঞান, কারিগরি জ্ঞান যেটা আমাদেরকে আরও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতা সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। আমি আশা করি, আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরাই সেই সোনার মানুষ যারা এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করবে।’
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে দ্রব্যমূল্যের কারণে হিমশিম খাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, তার ধাক্কাটা আমাদের দেশে লাগবেই। সে জন্য আমাদের আগে থেকে সতর্ক হতে হবে বলে মনে করেন।’ একইসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যুৎ ব্যবহার করা থেকে সাশ্রয়ী হওয়ারও আহ্বান জানান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শিখে এদেশের উপযুক্ত নাগরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেন উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে। আমার আর কি, ৭৬ বছর বয়স। যে কোনো দিন মৃত্যুবরণ করতে পারি। কিন্তু আমি চাই, বাংলাদেশে আমাদের নেতাকর্মী যারা, তারা সেইভাবে গড়ে উঠবে যেন এই দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে না পারে। খুনি, আলবদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী এরা যেন আর কোনোদিন এই দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। সেইভাবে জনমত সৃষ্টি করতে হবে।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি দোয়া ও আর্শীবাদ জানিয়ে সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন শেখ হাসিনা। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই যারা মেধাবী, অত্যন্ত জীবন জীবিকার ব্যবস্থা নিজেরা করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে। সেখানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে দক্ষপ্রশাসন ব্যবস্থাও দরকার। কাজেই প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা যে যেখানে পারদর্শী, সেইভাবে শিক্ষা নিতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিও যেমন দরকার আবার সেইভাবে আমাদের প্রশাসন বা কারিগরি সব ধরনের দরকার। ছাত্রলীগ যেন প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের মেধা বিকাশের একটি সুযোগ পায় এবং সেই কাজ করতে পারে; সেটিই আমি চাই।’
ছাত্রলীগ এদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। আগামী দিনেও কতারা বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূমিকা রাখবে এমন আশাবাদ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। ওই বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানী দায়িত্ব পান। তারা পদ হারালে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সভাপতি পদে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক পদে লেখক ভট্টাচার্য আসেন। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ‘ভারমুক্ত’ করে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/এনআর/একে